Main Menu

৮ বছর আগের অর্ধেক মামলারও তদন্ত শেষ হয়নি, নতুন দেড়শ

আট বছর আগে মতিঝিলে শাপলা চত্বরে সমাবেশ ঘিরে হেফাজতে ইসলামের তাণ্ডবের ঘটনায় মোট ৮৩টি মামলা হয়েছিল। সেসব মামলার অর্ধেকের তদন্তই শেষ করতে পারেনি পুলিশ। তার মধ্যে এবার তদন্তের খাতায় যোগ হয়েছে আরও দেড়শ মামলা।

আগের মামলাগুলোর তদন্ত এতদিনেও শেষ না হওয়ার জন্য তথ্য প্রমাণ জোগাড়ে ‘সময় লাগছে’ বলে জানিয়েছেন পুলিশ কর্মকর্তারা। নতুন মামলা আসায় এখন আগের মামলাগুলোর তদন্ত এক মাসের মধ্যে শেষ করতে নির্দেশ দিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর।

এদিকে আগের যেসব মামলার তদন্ত শেষ হয়েছে, সেগুলোর বিচারও এগোচ্ছে না। এই জন্য সাক্ষী না আসাকে কারণ দেখাচ্ছেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা।

নারী উন্নয়ন নীতি ও শিক্ষা নীতির বিরোধিতা করে ২০১০ সালে গড়ে উঠেছিল কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম। তবে যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে গণজাগরণ আন্দোলনের পাল্টায় রাজপথে নেমে সংগঠনটি বেশি পরিচিতি পায়।

শাহবাগের আন্দোলনের বিপরীতে ব্লগারদের শাস্তির দাবিতে ২০১৩ সালের ৫ মে মতিঝিলে সমাবেশ ডেকে ব্যাপক তাণ্ডব চালায় সংগঠনটি। পরে যৌথ অভিযান চালিয়ে তাদের মতিঝিল থেকে সরাতে হয়।

তখন কয়টি মামলা হয়েছিল- জানতে চাইলে পুলিশ সদর দপ্তরের ডিআইজি হায়দার আলী খান বলেন, ২০১৩ সালে মোট মামলা হয়েছিল ৮৩টি।

তখন শুধু ঢাকায় মামলা হয়েছিল ৫৩টি। বাকি ৩০টি মামলা হয় বিভিন্ন জেলায়।

এসব মামলার মধ্যে তদন্ত শেষ করে ২৯টির অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে এবং আসামি না পেয়ে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে চারটির।

“বাকিগুলোর তদন্ত চলছে,” বলেন পুলিশ কর্মকর্তা হায়দার।

মতিঝিল থেকে হেফাজতকে তখন ওঠানো হলেও পরে সংগঠনটির বিষয়ে ক্ষমতাসীনদের নরম সুর দেখা গিয়েছিল। তা এক ধরনের আপস ছিল বলে আওয়ামী লীগের জোটসঙ্গী বাম দলগুলোর নেতাদের অভিযোগ। এর মধ্যে মামলাগুলোর তদন্তও গিয়েছিল ঝিমিয়ে।

২০১৩ সালের পর হেফাজত প্রশ্নে ‘কার্যকর পদক্ষেপ’ গ্রহণ করা হয়নি বলে সংগঠনটির সাম্প্রতিক তাণ্ডবের পর স্বীকারোক্তি আসে আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা, সাবেক মন্ত্রী তোফায়েল আহমেদের।

তোফায়েল এখন বলছেন, হেফাজত প্রশ্নে তখনই শক্ত হওয়া দরকার ছিল

মামলাগুলোর তদন্ত শেষ না হওয়ার বিষয়ে মতিঝিল বিভাগের উপকমিশনার সৈয়দ নুরুল ইসলাম বলেন, “এটা অন্য কোনো মামলার মতো না। এটা অনেক বিস্তৃত। তথ্য প্রমাণ জোগাড় করতে সময় লাগছে।”

ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান কৌঁশুলি আবদুল্লাহ আবু জানান, ২০১৩ সালের ৫ মের ঘটনার চারটি মামলা ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতে বিচারাধীন।

এগুলোর অগ্রগতি নেই কেন- প্রশ্নে তিনি বলেন, “বেশিরভাগ মামলাতেই সাক্ষী আসছে না।”

আদালতে সাক্ষী হাজিরে ব্যর্থতার দায়ও রাষ্ট্রপক্ষ ও পুলিশের উপরই বর্তায়।

এদিকে বেশ কয়েক বছর নিষ্ক্রিয় থাকা হেফাজতের নেতারা গত বছরের শেষ দিকে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য স্থাপনের বিরোধিতায় সরব হতে থাকে। এরপর গত মার্চ মাসের শেষে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সফরের বিরোধিতায় কর্মসূচি নিয়ে নামে রাজপথে।

তাদের বিক্ষোভ ও হরতালের কর্মসূচি থেকে কয়েকদিনে পুলিশের সঙ্গে সংঘাতে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও চট্টগ্রামে সংঘাত-সহিংসতায় ডজন খানেক প্রাণহানি ঘটে। এরমধ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চট্টগ্রামের হাটহাজারীর ঘটনার সঙ্গে আট বছর আগের ঘটনার মিল দেখা যায়।

২০১৩ সালের ৫ মে মতিঝিল শাপলা চত্বর থেকে প্রেস ক্লাব পর্যন্ত এলাকায় গাছ উপড়ে ফেলা হয়েছিল, দোকান-পাট, গাড়ি পোড়ানো হয়েছিল, বিভিন্ন ভবন ভাংচুর করা হয়েছিল।

পুলিশ সদর দপ্তরে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এবার ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে মোট ১৫১টি মামলা হয়েছে।

এসব মামলায় ৩ হাজার ২৪৩ জনকে আসামি করা হয়েছে। ১ হাজার ৪৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানান ডিআইজি হায়দার।

নতুন এত মামলার মধ্যে পুলিশ সদর দপ্তর সম্প্রতি পুরনো সব মামলা দ্রুত নিস্পত্তি করার জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগকে নির্দেশ দিয়েছে।

মতিঝিল বিভাগের উপ কমিশনার সৈয়দ নুরুল ইসলাম বলেন, “পুলিশ সদর দপ্তরের একটি নির্দেশনা পেয়েছি। যেখানে এক মাসের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে বলা হয়েছে। চেষ্টা করব এই সময়ের মধ্যে তদন্ত শেষ করতে।”

এবারের মামলায় হেফাজতের কেন্দ্রীয় নেতাদের গ্রেপ্তারে পুলিশের তৎপরতা গতবারের চেয়ে বেশি। এরই মধ্যে বেশ কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের পুরনো মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হচ্ছে।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, হেফাজত নেতাদের কেউ কেউ ২০১৩ সালের ঘটনার সঙ্গেও সম্পৃক্ত।

যদিও ২০১৩ সালের পর হেফাজতের এই নেতারা প্রকাশ্যেই ছিলেন এবং তাদের ধরতে পুলিশের কোনো তৎপরতা দেখা যায়নি।