Main Menu

হবিগঞ্জে ‘করোনা যুদ্ধে’ পঞ্চপাণ্ডব

করোনা পরিস্থিতিতে দেশ কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। অফিস-আদালত, ব্যবসা, যানবাহন, শিল্পপ্রতিষ্ঠান সবকিছুই বন্ধ রয়েছে। ঘরবন্দী থাকার কারণে কর্মহীন হয়ে পড়েছেন দেশের অধিকাংশ মানুষ। নিম্ন ও নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোর অবস্থা সবচেয়ে নাজুক। আয়-রোজগার বন্ধ হয়ে যাওয়ায় মানবেতর দিন কাটছে তাদের। অনেক পরিবার শুধুমাত্র সরকারি-বেসরকারি ত্রাণের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে।

যত দিন যাচ্ছে দেশের করোনা পরিস্থিতির আরও অবনতি হচ্ছে। এ অবস্থায় বেশ কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে সরকার। কিন্তু সেই পদক্ষেপ অনেকটা ব্যর্থ করে দিচ্ছেন জনগণ। করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে মানুষকে ঘরে থাকার জন্য বারবার অনুরোধ করা হলেও মানুষ ঘরে থাকতে চাচ্ছেন না। কারণে-অকারণে বাইরে দলবেধে ঘোরাঘুরি করে বাড়াচ্ছেন সংক্রমণের ঝুঁকি। এ অবস্থায় করোনা সংক্রামণ ঠেকাতে সরকারের নেওয়া পদক্ষেপগুলো সফল করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে স্থানীয় প্রশাসনকে।

হবিগঞ্জ জেলায় এখন পর্যন্ত একজন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছেন। তাও তিনি হবিগঞ্জের বাসিন্দা না হওয়ায় অনেকটা নিরাপদ রয়েছে জেলাটি। সম্পূর্ণ জেলাকে করোনামুক্ত রাখতে এবং করোনা আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার জন্য জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন অনেকেই। এরমধ্যে সবচেয়ে পরিশ্রম করে যাচ্ছেন হবিগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট মো. আবু জাহির, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসান, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ উল্ল্যা, হবিগঞ্জ সদর আধুনিক হাসপাতালের দুই চিকিৎসক ডা. দেবাশীষ দাশ ও ডা. মিথুন রায়।

এমপি আবু জাহির

প্রাণঘাতী করোনার ভয়ে বিভিন্ন এলাকার জনপ্রতিনিধিরা যখন ঘরে বসে রয়েছেন, তখন নিজের জীবনের পরোয়া না করে মানুষকে সচেতন করতে একপ্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ছুটে চলেছেন হবিগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট মো. আবু জাহির। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত খেয়ে না খেয়ে গ্রামে ও পাড়া-মহল্লায় ঘুরে ঘুরে মানুষের মধ্যে সচেতনতার সৃষ্ট করেছেন তিনি। পাশাপাশি বিতরণ করছেন মাস্ক, গ্লাভস ও হ্যান্ড স্যানিটাইজাসহ বিভিন্ন সুরক্ষা সরঞ্জাম। করোনার প্রাদুর্ভাব বাড়ার পর যখন হবিগঞ্জ অনেকটা অঘোষিত লকডাউন হয়ে পড়লে কর্মহীন হয়ে পড়েন লাখ লাখ মানুষ। ঠিক তখনই সময় ক্ষেপণ না করে কর্মহীন মানুষের হাতে তুলে দেন খাবার। এই কার্যক্রম এখনও অব্যাহত রেখেছেন তিনি।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসান

নিজের মেধা ও শ্রম দিয়ে জেলাকে করোনা মুক্ত রাখতে বলতে গেলেই একাই ভূমিকা পালন করছেন হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসান। সম্পূর্ণ জেলার প্রশাসনিক অবস্থা সামলানোর পাশাপাশি ত্রাণ নিয়ে ছুুটে চলেছেন মানুষের ঘরে ঘরে। যেখান থেকেই ত্রাণের জন্য কল আসছে সময় ক্ষেপণ না করে সেখানেই ত্রাণ নিয়ে ছুটে গেছেন তিনি। পাশাপাশি সাংবাদিকদের তথ্য প্রদান, মানুষের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি, শহরকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখায়ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন তিনি।

করোনা পরিস্থিতির শুরুতেই যখন অসাধু ব্যবসায়ীরা অধিক মুনাফা লাভের আশায় সাধারণ মানুষকে জিম্মি করতে শুরু করেন, তখনই জোরালো পদক্ষেপ গ্রহণ করেন তিনি। অস্থিতিশীল বাজারে মাত্র কয়েকদিনের ব্যবধানে স্বস্তি ফিরিয়ে আনেন। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ রাখায় স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেন শহরবাসীসহ সারা জেলার মানুষ। এখনও তিনি দিনরাত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন শুধুমাত্র জেলাবাসীকে নিরাপদ রাখার জন্য।

পুলিশ সুপার মোহাম্মদ উল্ল্যা

শুধুমাত্র আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ রাখার কথা পুলিশ প্রশাসনকে। কিন্তু হবিগঞ্জের পুলিশ প্রশাসন শুধুমাত্র আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকেনি। করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সব ক্ষেত্রেই এগিয়ে এসেছেন হবিগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ উল্ল্যা। আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি সচেতনা সৃষ্টি, অসহায়ের মধ্যে ত্রাণ ও স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিতরণ করছেন শুরু থেকেই। নিজ উদ্যোগে অবহেলিত চা শ্রমিকদের মধ্যে বিতরণ করেছেন খাবার। এছাড়া লকডাউন সফল করতে সময়োপযোগী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন।

ডা. দেবাশীষ দাশ ও ডা. মিথুন রায়

সূত্রে জানা গেছে- করোনা আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসার জন্য যতেষ্ট পরিমাণে স্বাস্থ্য সুরক্ষা নেই হবিগঞ্জ স্বাস্থ্য বিভাগের কাছে। এরপরও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে হবিগঞ্জে করোনা আক্রান্ত একজন রোগীর চিকিৎসা দিয়ে আসছেন ডা. দেবাশীষ দাশ ও ডা. মিথুন রায়। এছাড়াও তারা দুইজনে করোনা সন্দেহে আইসোলেশনে থাকা রোগীদের সাথেও সার্বক্ষণিক অবস্থান করছেন। রোগীর সংখ্যা বাড়লে তারাই চিকিৎসা দেবেন বলে জানা গেছে। ইতোমধ্যে দেশে করোনা আক্রান্ত হয়ে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজের চিকিৎসক ডা. মঈন উদ্দিন মারা গেছেন। আক্রান্ত হয়েছেন আরও একাধিক চিকিৎসক ও নার্সসহ বেশ কয়েকজন স্বাস্থ্যকর্মী। কিন্তু এরপরও আতঙ্কিত না হয়ে সার্বক্ষণিক চিকিৎসা সেবা প্রদান করে আসছেন তারা।

এই পঞ্চপাণ্ডব ছাড়াও হবিগঞ্জের করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দিনরাত পরিশ্রম করে আসছেন আরও অনেকে। প্রতিটি উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, পুলিশ সদস্য, বেশ কয়েকজন জনপ্রতিনিধি ও হবিগঞ্জ সদর আধুনিক হাসপাতালের চিকিৎসক, কর্মকর্তা ও কর্মচারী। এছাড়া স্বেচ্ছাসেবীরাও কাজ করে যাচ্ছেন নিয়মিত।



(Next News) »