Main Menu

সুস্থ থাকার মন্ত্র জানালেন ‘নতুন মা’ হওয়া মডেল জান্নাতুল পিয়া

এমনিতে শরীরচর্চা নিয়মিতই করেন ফ্যাশন মডেল ও অভিনেত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস পিয়া। আর তা বাদ যায়নি গর্ভে সন্তান আসার পরের দিনগুলোতেও। কিছুদিন আগে সন্তানের মা হয়েছেন তিনি।

নিজের পেশা ও ব্যক্তি জীবনের ব্যস্ততার সঙ্গে তাল মিলিয়ে মন ও শরীরের সুস্থতার দিকে কী করে নজর রাখেন জান্নাতুল ফেরদৌস পিয়া?

সে সব নিয়েই আলাপ হল।

বেবি বাম্পের ছবি গত অক্টোবর মাসে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ করে গর্ভধারণের খবর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জানিয়েছিলেন এই মডেল। ফটোশুট করেছেন শরীরে ফুটে ওঠা গর্ভকালের বদল নিয়েও। অন্তঃসত্ত্বা শরীরে জিমে গিয়ে ব্যায়ামও করছেন।

শারীরিক এই অবস্থায় জিম করতে কি কোনো সমস্যা হয়েছে?

“একদমই না…এই সময়ে জিম করা উচিত”, বললেন জান্নাতুল পিয়া।
“আমরা জানি না বলে অনেক ভুল ধারণা পোষণ করে থাকি। যারা সন্তান নিতে চাচ্ছেন বা গর্ভধারণ করেছেন তাদের আলাদা কোনো বিশেষ শারীরিক সমস্যা না থাকলে অবশ্যই জিম করা প্রয়োজন।”

‘বেবি বাম্প’ নিয়েও জিমে জান্নাতুল পিয়া

গর্ভকালের জিমে শরীরচর্চায় বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিয়েছিলেন বলেও জানালেন তিনি।

জান্নাতুল পিয়া বলেন, “প্রশিক্ষকদের পরামর্শ নিয়েছিলাম; পাশাপাশি ইউটিউব ও গুগলেও অনেক ঘাঁটাঘাঁটি করেছি।”

২০১৪ সালে ফারুক হাসান সামীরের সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধেন জান্নাতুল পিয়া। গত ফেব্রুয়ারি মাসে প্রথম সন্তানের মুখ দেখলেন তারা। এই দম্পতির ছেলে সন্তানের বয়স এরমধ্যে ৩ মাস পেরিয়েছে।

দেশের হাসপাতালেই সন্তান প্রসব করেছেন জানিয়ে জান্নাতুল বললেন, “ অকারণে ডাক্তার-হাসপাতালের দোষ না দিয়ে আমরা যদি একটু নিজেদের জীবনযাত্রার দিকে নজর দেই তাহলে দেখব, আমরা কতটা অসচেতনভাবে জীবন কাটাই। আমি মনে করি না এদেশের ডেলিভারি বা চিকিৎসা খাত খারাপ।”
মা হওয়ার পরে শারীরিক ও মানসিক বদলের সঙ্গে নিজেকে কীভাবে মানিয়ে নিচ্ছেন?

জান্নাতুল পিয়া বলেন, “আমি মনে করি প্রতিটা সময়ের আলাদা একটা সৌন্দর্য আছে। প্রতিটা বয়সের সাথে আলাদা একটা ম্যাচিউরিটি আসে।

“সেটাকে গ্রহণ করে সে অনুযায়ী নিজেকে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করাই বুদ্ধিমানের কাজ। আমি বরাবর নিজের বয়সও শারীরিক অবস্থা অনুযায়ী নিজেকে উপস্থাপন করতে পছন্দ করি।“

এরমধ্যে শরীরচর্চায় ফিরেছেন আন্তর্জাতিক ফ্যাশন ম্যাগাজিন ভোগের এই প্রচ্ছদকন্যা।

এ নিয়ে তিনি বললেন, “জিম করার কারণেই মূলত ডেলিভারির পর পর শুকানো শুরু করেছি, এতে বাড়তি চর্বিটা কমে যায়। …দেড় মাস পর থেকে জিম শুরু করেছি।”

জান্নাতুল পিয়ার এই ফিটনেস সচেতনতা শুধু পেশাগত কারণে নয়; বরং নিজের ও এখন সন্তানের কথা ভেবেও।

“আমি সবকিছুই গুরুত্ব অনুযায়ী করি এবং তা করা উচিত বলেই মনে করি। আমি একজন মা এখন সবার আগে। আমার কাছে সন্তানের স্বাস্থ্য, তারপর আমার স্বাস্থ্য এরপর আমার পরিবার বা অন্যান্য কিছু। তারপর আমার ফিগার। আমি জিম যে কেবল মডেলিংয়ের জন্য করি তা নয়, আমার সুস্থতা এর অন্যতম প্রধান কারণ।”
ব্যায়াম শুধু শরীরের ফিটনেসই দিচ্ছে তা নয়, এতে মানসিক স্বাস্থ্যের সুস্থতাও ধরে রাখা যায় বলে বিশেষ করে নতুন মায়েদের শরীরচর্চায় সময় দিতে পরামর্শ দিলেন জান্নাতুল পিয়া।

তিনি বলেন, “মা হওয়ার পরে শারীরিক এমন পরিবর্তনে অনেক মেয়েই হতাশাগ্রস্ত হয়ে যায়। হরমোনের পরিবর্তন শারীরিক ও মানসিক অবস্থার উপর প্রভাব ফেলে। আমি সুস্থতার পাশাপাশি নিজেকে আয়নার সামনে সুন্দরভাবে দেখতেও জিম করি। ”

গর্ভকালে সব সময় উৎফুল্ল থাকতেন জানিয়ে সদ্য মা হওয়া এই নারী বলেন, “…মায়ের মানসিক প্রভাব সন্তানের উপরে পরে, তাই আমি সবসময়ই খুব ভালো মেজাজে থাকতাম।

“আর অনেক ঘুরে বেড়িয়েছি এই সময়ে; যা আমার মন মেজাজ আরো ভালো রাখতো। শরীরচর্চাও মানসিকচাপ অনেকটাই কমিয়ে দেয় ।”

বিশেষজ্ঞরা বলেন, অন্তঃসত্ত্বা মা যদি গান শোনেন তবে তা ভালো প্রভাব ফেলে পেটের সন্তানের উপর। জান্নাতুল পিয়াও এ সময় বেছে নিয়েছিলেন সুরের মূর্ছনা।

তিনি বলেন, “গর্ভকালীন সময়ে আমি ধ্যান করতাম। আসন পেতে বসেই যে মেডিটেশন করতে হবে তা নয়; আমি ঘুমের আগে মিউজিক ছেড়ে কিছুক্ষণ সময় কাটাতাম, নিজেকে সময় দেওয়া ইত্যাদি নানাভাবে মেডিটেশন করতাম। এতে মন অনেক শান্ত থাকতো।”

র‌্যাম্প মডেলিং দিয়ে ক্যারিয়ার শুরু করা জান্নাতুল পিয়া ২০০৭ সালে মিস বাংলাদেশ খেতাব বিজয়ী হন। পরবর্তীতে তিনি ‘চোরাবালি’, ‘স্টোরি অব সামারা’,‘গ্যাংস্টার রির্টানস’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন।

প্রসাধনী সামগ্রী ট্রেসেমের শুভেচ্ছাদূত হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে ২০১৭ সালে নিউ ইয়র্ক ফ্যাশন উইকের আসরে র‌্যাম্পে হেঁটেছেন বাংলাদেশের মডেল জান্নাতুল ফেরদৌস পিয়া।

নিজের পেশা, শরীরচর্চা ও সন্তানের মা পরিচয়ে কোনো ভারসাম্যহীনতা না রাখাই পছন্দ এই মডেলের।
সদ্য মা হওয়া জান্নাতুল সন্তানকে বুকের দুধ পান করাচ্ছেন জানিয়ে বলেন, “অবশ্যই আমার সন্তাদের সুস্থতা আমার কাছে সবার আগে।”

তারপরও অনেকের নানা ‘ভুল ধারণা’ নিয়ে তিনি বলেন, “অনেকে ভেবে থাকেন মিডিয়ায় যারা কাজ করে তারা সব ছেড়ে আগে নিজের সৌন্দর্য ও ফিটনেসের দিকে বেশি মনোযোগ দেয়, এটা আসলে ঠিক না।

“যারা সচেতন তারা বরাবরই নিজের সুস্থতার দিকে খেয়াল রাখেন এবং সে অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকেন। আমার ক্ষেত্রেও তা। আমি মা, আমার সন্তানের সুস্থতা নিশ্চিত করে তারপর আমি নিজের ফিটনেসের দিকে খেয়াল রাখি।”

পিরিয়ডের সময়ও কি শরীরচর্চা চলে?

বিশেষ এই দিনগুলোতেও ‘জিম বাদ দেই না ‘ জানিয়ে জান্নাতুল পিয়া বলেন, “তবে শরীরচর্চায় কিছুটা পরিবর্তন আনি। পা বা কোমড়ের নিচের অংশের ব্যায়ামগুলো বাদ দিয়ে হাত, কাঁধ ইত্যাদির ব্যায়াম করি।”

ইন্ডিয়ান প্রিন্সেস ইন্টারন্যাশনাল-২০১৩ সৌন্দর্য প্রতিযোগিতায় মুকুট জয় করা জান্নাতুল পিয়া বরাবর স্বাস্থ্যকর খাবারে অভ্যস্ত।

মা হওয়ার আগে ও পরের খাদ্যাভাসে কি বিশেষ কোনো বদল এসেছে?

জান্নাতুল পিয়া বলেন, “খুব বেশি ভাজাপোড়া, মশলাদার খাবার, চকলেট, মিষ্টি , কোল্ড ড্রিংকস কখনই খেতাম না, এখনও খাই না।

“গর্ভাবস্থার মাঝামাঝি সময় থেকে এখন পর্যন্ত কিছু খাবার নিয়মিত খেয়ে যাচ্ছি; মধু, কালোজিরা এগুলো। … আর চিনি খাওয়া মানসিক চাপ বাড়ায় । এগুলো আমি মেনে চলি বরাবর। “
গর্ভকালে একজন পুষ্টিবিদের পরামর্শ মেনে খাবার তালিকা করে নিয়েছিলেন জানিয়ে তিনি বলেন, “এখানে একটা কথা আছে; এ ধরনের চার্টে স্যামন, টুনা মাছের স্যান্ডুউইচ ইত্যাদি নানা ধরনের খাবারের পরামর্শ দেওয়া থাকে।

“যেহেতু, আমি ভাত খেতে পছন্দ করি তাই খাবার তালিকায় নির্দিষ্ট পরিমাণ কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন ইত্যাদি নিজের পছন্দ মত খাবারে পরিবর্তন করে নিয়েছিলাম।”

অনেক অন্তঃসত্ত্বা নারীর নাকি হুটহাট নানা খাবার খাওয়ার ইচ্ছে জাগে। জান্নাতুল পিয়ার বেলায় কী ঘটেছিল?

“আমার ক্ষেত্রে এমনটা হয়নি। হয়ত বরাবর এক ধরনের খাদ্যাভাসে অভ্যস্থ হওয়ায় এমনটা হয়নি”, বললেন তিনি।

খাদ্যাভাসে নিয়ম বজায় রাখার পরামর্শ দিয়ে জান্নাতুল বলেন, “অনেকেই ভাবেন যে আমি এক মাস খাবো বা দুতিন মাস খাবো তারপর আবার পরিবর্তন করবো; এটা ভুল।

“জীবনযাত্রার শৃংখলা থাকা জরুরি। খাদ্যাভাসের ক্ষেত্রেও তা। ভালো খাবারে অভ্যস্ত হওয়া ও তা নিয়মিত চালিয়ে যাওয়া সুস্থ থাকার অন্যতম শর্ত।”

মুড সুইং সামলান কীভাবে?

এ সমস্যার মুখে এখনও পড়তেই হয়নি জানিয়ে জান্নাতুল পিয়া বলেন, ”গর্ভাবস্থায় এবং সন্তান জন্মদানের পর মেয়েদের প্রচণ্ড মুড সুইং সমস্যা দেখা দেয়। এই সময় হরমোনের পরিবর্তন হয় খুব বেশি। কিন্তু আমার ক্ষেত্রে এই সমস্যা একদমই হয়নি।

”গর্ভাবস্থায় জিম করা ও এই বিষয়গুলো সম্পর্কে আমার মানসিক প্রস্তুতি ছিল; তাই এ ধরনের সমস্যা হয়নি হয়ত। আর পিরিয়ডের সময় মুড সুইং সমস্যা হয়নি কখনও। তাছাড়া সবসময়ই খুব ব্যাস্ত থাকা হয়; তাই আলাদাভাবে এমন কিছু কখনও অনুভব করিনি।”

নতুন মা হওয়ার পর ঘুমের ব্যাঘাত ঘটছে কি?

“গর্ভকালীন সময়ে বেশ আরামেই ঘুমিয়েছি”, বললেন জান্নাতুল।

“তবে শেষের দিকে ঘুমে একটু সমস্যা দেখা দিয়েছিল, তখন শরীর খানিকটা ভারী হয়ে যায় বলে এমনটা হয়। এছাড়া ঘুমে আর কোনো সমস্যা ছিল না । …এখন বাবুকে একটু পর পর উঠে খাওয়াতে হয় তাই একটানা ঘুম হচ্ছে না আমার।”
সন্তান হওয়ার পর এতকিছু কী করে সামলানো সম্ভব হচ্ছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “কোর্টে যাচ্ছি না এখনও, যাওয়া শুরু করবো সামনে। মডেলিংয়ের কাজ আপাতত করছি না। আর পরিবার তো আগেও ছিলো। স্বামী-সংসার তো এর আগেও সামলিয়েছি। …সন্তানের জন্য কর্মক্ষেত্রে বাড়তি চাপ খুব একটা অনুভব করছি না।”

শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ থাকতে জীবন যাপনে শৃংখলা ধরে রাখতে পছন্দ করা জান্নাতুল বলেন, “আমি ছোট থেকেই শৃংখলার মধ্যে বড় হয়েছি এবং গুছিয়ে চলার চেষ্টা করেছি। এখনও আমি নিজের জীবন ও লাইফস্টাইল খুব গুছিয়ে চলতে পছন্দ করি এবং সে অনুযায়ী চলিও।”