Main Menu

সুনামগঞ্জে গৃহবধূকে হত্যা করে লাকড়ির তলে লাশ লুকিয়ে রেখেছিল শাশুড়ি

সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলায় ঘরের পাশে লাকড়ি রাখার মাচার নিচ থেকে গৃহবধূ আজমিনা বেগমের (২৪) লাশ উদ্ধারের ঘটনায় আজমিনার শাশুড়িসহ তিনজনকে আটক করেছে র‌্যাব। তাঁরা জিজ্ঞাসাবাদে এ হত্যাকাণ্ড ও লাশ লুকানোর সঙ্গে জড়িত বলে স্বীকার করেছেন। তাঁদের বরাত দিয়ে র‌্যাব জানায়, হত্যার আগে আজমিনাকে ধর্ষণ করা হয়েছে। পরে তাঁর লাশ খড় দিয়ে ঢেকে রাখা হয়।

তাহিরপুর উপজেলার বাদাঘাট উত্তর ইউনিয়নের জৈতাপুর গ্রামে গত মঙ্গলবার রাতে এ হত্যার ঘটনা ঘটে। পরদিন বুধবার সকালে বসতঘরের পাশে খড় দিয়ে ঢাকা অবস্থায় আজমিনা বেগমের রক্তাক্ত লাশ পাওয়া যায়।

নিহত আজমিনা গ্রামের কৃষিশ্রমিক শাহনুর মিয়ার স্ত্রী। এ ঘটনায় আজমিনার বাবা মো. আবদুল্লাহ বাদী হয়ে তাহিরপুর থানায় অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন।

গোলাপ লাঠি দিয়ে আজমিনার মুখে আঘাত করেন। এ সময় মাটিতে লুটিয়ে পড়েন আজমিনা। চিৎকার দেওয়ার আগেই তাঁর মুখ ও গলায় চেপে ধরে ঘর থেকে বের করে নিয়ে যান গোলাপ।

র‍্যাবের হাতে আটক তিন ব্যক্তি হলেন জৈতাপুর গ্রামের নাজির হোসেনের ছেলে গোলাপ মিয়া (৩৬), আকরম আলীর ছেলে মো. সোহাগ (২২) ও আজমিনার শাশুড়ি হেলেনা বেগম (৪৫)। র‍্যাবের সুনামগঞ্জ কোম্পানির (সিপিসি-৩) অধিনায়ক সিঞ্চন আহমেদ, র‍্যাব কর্মকর্তা সহকারী পুলিশ সুপার আবদুল্লাহ রাসেলের নেতৃত্ব অভিযান চালিয়ে তাঁদের আটক করা হয়। গোলাপ মিয়া এলাকায় প্রভাবশালী হিসেবে পরিচিত।
র‍্যাবের জিজ্ঞাসাবাদের তিনি আজমিনা বেগমকে হত্যার কথা স্বীকার করেছেন। তবে তিনি হত্যার উদ্দেশ্যে তাঁকে প্রথমে আঘাত করেননি বলে জানিয়েছেন।

আজমিনার বেগমের স্বামী শাহনুর মিয়া হাওরে ধান কাটার শ্রমিক হিসেবে জেলার জামালগঞ্জ উপজেলার সাচনাতে ছিলেন। এ কারণে আজমিনা পাঁচ বছরের এক ছেলে ও দুই বছরের এক মেয়েকে নিয়ে ঘরে একাই থাকতেন।

আটক গোলাপ মিয়ার বরাত দিয়ে র‍্যাব জানায়, গোলাপ মিয়ার সঙ্গে আজমিনার বেগমের শাশুড়ি হেলেনা বেগমের আগে থেকেই যোগাযোগ ছিল। এই সুবাদে তিনি তাঁদের বাড়িতে যাওয়া-আসা করতেন। মঙ্গলবার রাতে গোলাপ আজমিনার ঘরে ঢুকে তাঁকে ধর্ষণ করেন। পরে ঘর থেকে বের হওয়ার সময় আজমিনা ক্ষোভে গোলাপ মিয়াকে জুতা দিয়ে কয়েকটি বাড়ি মারেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে গোলাপ লাঠি দিয়ে আজমিনার মুখে আঘাত করেন। এ সময় মাটিতে লুটিয়ে পড়েন আজমিনা। চিৎকার দেওয়ার আগেই তাঁর মুখ ও গলায় চেপে ধরে ঘর থেকে বের করে নিয়ে যান গোলাপ। একপর্যায়ে আজমিনা নিস্তেজ হয়ে পড়েন। তখন তাঁকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়।

এ সময় হেলেনা বেগমকে ডেকে বিষয়টি জানান গোলাপ। দুজন মিলে লাশ লুকানোর সময় সেটি দেখে ফেলেন মো. সোহাগ। তিনজনেরই বিপদ হবে জানিয়ে সোহাগকে কিছু টাকা দিয়ে কয়েক দিন লুকিয়ে থাকার জন্য তাঁকে সুনামগঞ্জে পাঠিয়ে দেন গোলাপ ও হেলেনা। পুলিশ যাতে সোহাগকে সন্দেহ করে, এ জন্য ঘটনাস্থলে সোহাগের ব্যবহৃত একটি শার্ট রেখে দেন তাঁরা। র‍্যাব প্রথমে সোহাগকে সুনামগঞ্জ শহর থেকে আটক করে। পরে তাঁর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী অন্য দুজনকে আটক করা হয়। তবে গোলাপ মিয়া র‍্যাবের কাছে বলেছেন, আজমিনার সঙ্গে তাঁর আগে থেকেই সম্পর্ক ছিল। তিনি তাঁকে হত্যার উদ্দেশ্যে আঘাত করেননি।

র‍্যাবের কর্মকর্তা আবদুল্লাহ রাসেল বলেন, ওই গৃহবধূর স্বামী একজন নিরীহ শ্রমিক। হত্যাকাণ্ডের পর তিনি কাউকে সন্দেহ করতে পারছেন না বলে জানান। র‍্যাব ঘটনার পরপরই খুনের বিষয়টি উদ্‌ঘাটনে কাজ শুরু করে। আটক তিনজনকে তাহিরপুর থানায় হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলছে।

তাহিরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল লতিফ তরফদার বলেন, ‘আমরা শুনেছি গৃহবধূ আজমিনা হত্যায় জড়িত সন্দেহে র‍্যাব তিনজনকে আটক করেছে। তবে আমাদের কাছে এখনো তাঁদের হস্তান্তর করা হয়নি।’