Main Menu

সিলেট মহানগর যুবলীগের কমিটি নিয়ে মুক্তি-মুশফিকের সামনে অভিযোগের পাহাড়

২০১৯ সালের ২৯ জুলাই অনুষ্ঠিত হয়েছিল সিলেট মহানগর যুবলীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন। এদিন সভাপতি পদে তৎকালীন আহবায়ক আলম খান মুক্তি সভাপতি ও যুগ্ম আহবায়ক মুশফিক জায়গীরদার তিন বছরের জন্য সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।

তিন বছর মেয়াদী এই কমিটি ইতোমধ্যে দুইবছর পার করলেও এখনো গঠন করা হয়নি পূর্ণাঙ্গ কমিটি। ফলে দীর্ঘদিন ধরে যুবলীগের রাজনীতিতে সক্রিয় থাকা নেতাকর্মীরা কমিটি ‘হচ্ছে’, ‘হয়ে যাবে’, ‘শিগগিরই’ এমন শব্দের মধ্যেই আটকা পড়ে আছেন।

দলীয় সূত্র জানিয়েছে, নেতাকর্মীদের চাপে এবং কেন্দ্রের নির্দেশনায় গত জুলাই মাসে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া শুরু করেন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। ১০১ সদস্যের একটি কমিটির খসড়াও তৈরি করেছেন তারা। এই খসড়া তালিকা নিয়ে সিলেট বিভাগ যুবলীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক প্রফেসর ড. রেজাউল কবিরের কাছে গেলে তিনি আগস্ট মাসের পর কমিটি অনুমোদনের ব্যপারে ব্যবস্থা নেবেন বলে আশ্বাস দেন।

তবে, ১০১ সদস্যের এই খসড়া কমিটি নিয়ে উঠেছে ব্যাপক অভিযোগ। মহানগর যুবলীগের প্রতিষ্ঠাকালীন কমিটি থেকে শুরু করে বিগত কমিটির ৯০ শতাংশ নেতাকে এই কমিটিতে রাখা হয়নি বলে অভিযোগ করেছেন বঞ্চিত নেতারা। কমিটি গঠনের ব্যপারে সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদকের সাথে কোন ধরণের যোগাযোগ করেননি মুক্তি ও মুশফিক। একই সাথে খসড়া কমিটিতে ছাত্রদল-শিবির থেকে অনুপ্রবেশকারী, হত্যা মামলার আসামী, চাঁদাবাজ, ভূমিখেকোদের স্থান হওয়ার পাশাপাশি আত্মীয়করণের অভিযোগ উঠেছে। এসব বিষয় নিয়ে সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের সাথে সাক্ষাৎ ও অভিযোগ তুলে ধরেছেন বঞ্চিত নেতারা।

এ ব্যপারে মহানগর যুবলীগের আহবায়ক কমিটির সাবেক সদস্য ও মহানগর যুবলীগের সম্মেলনে সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী আব্দুল লতিফ রিপন বলেন, মহানগর যুবলীগের সর্বশেষ আহবায়ক কমিটির মেয়াদ ছিল ৩ মাস। কিন্তু তারা সম্মেলন আয়োজনে সাড়ে ৫ বছর সময় নেন। সম্মেলনের পূর্বে মাত্র ১ সপ্তাহের মধ্যে ছাত্রদল-শিবির থেকে অনুপ্রবেশকারী, হত্যা মামলার আসামী, চিহ্নিত চাঁদাবাজদের দিয়ে তারা ২৭টি ওয়ার্ড কমিটি গঠন করেন এবং তাদেরকে ভোটার বানিয়ে নির্বাচিত হন বর্তমান নেতৃত্ব। সেসময় আমরা প্রার্থী হলে আমাদেরকে ভোটার তালিকা দেয়া হয়নি। কেন্দ্রে এসব বিষয়ে অভিযোগ করলে তারা একটি তালিকা আমাদের হাতে দেন যাতে ছিল না ভোটারদের ঠিকানা ও মোবাইল নম্বর। এমন অবস্থায় যুবলীগের তৎকালীন নেতৃত্বকে ম্যানেজ করে মুক্তি ও মুশফিক নির্বাচিত হন। নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই তারা দীর্ঘদিন ধরে যুবলীগের রাজনীতিতে সক্রিয় নেতা এবং সাবেক ছাত্রনেতাদের এড়িয়ে তাদের একান্ত বাধ্যগত ছাত্রদল-শিবির থেকে অনুপ্রবেশকারীদের দিয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। এখন পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনে তারা যা করেছেন তা সিলেটের রাজনীতির জন্য বড় ক্ষতির কারণ হবে।

রিপন আরো বলেন, মহানগর যুবলীগের সর্বশেষ আহবায়ক কমিটি ছিল ৬১ সদস্য বিশিষ্ট। এবারের প্রস্তাবিত কমিটিতে এই কমিটির ৫৪ জনকে বাদ দেয়া হয়েছে। এদের মধ্যে ৫ জন মহানগর আওয়ামী লীগের কমিটিতে স্থান পেলেও বাকি ৪৯ জনের বেশীরভাগই রাজনীতিতে সক্রিয় আছেন, তবুও তারা স্থান পাননি এ কমিটিতে। এছাড়া সম্মেলনে সভাপতি পদে প্রার্থী ছিলেন শান্ত দেব এবং সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী ছিলাম আমি ও জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এ. রায়হান চৌধুরী। আমাদের এই তিনজনকেও কমিটিতে রাখা হয়নি।

মহানগর যুবলীগের আহবায়ক কমিটির সাবেক সদস্য ও মহানগর যুবলীগের সম্মেলনে সভাপতি পদপ্রার্থী শান্ত দেব বলেন, নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই বর্তমান সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক সাবেক যুবলীগ ও ছাত্রলীগ নেতাদের বাদ দিয়ে নিজেদের বলয় তৈরি করে একান্ত বাধ্যগতদের নিয়ে রাজনীতি করে আসছেন। আমার সম্মেলনে প্রার্থী থাকলেও নির্বাচিত হওয়ার পর আমাদের সাথে কোন সমন্বয় করেননি তারা। আর এখন পূর্ণাঙ্গ কমিটি করার নামে তারা যেটি করছেন তা কোনভাবেই মানা যাবে না। ইতোমধ্যে আমরা সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের সাথে সাক্ষাৎ করে এসব অভিযোগ তুলে ধরেছি। তাদের পরামর্শক্রমে শোকাবহ আগস্ট মাস শেষে আমরা এসবের প্রতিবাদ করব।

শান্ত ও রিপন অভিযোগ করে বলেন, বরং প্রস্তাবিত কমিটিতে স্থান হয়েছে মহানগর যুবলীগের সভাপতির আপন ভাই বিলাল খান, ইয়ামিন আরাফাত খান, এক বোন ও খালাতো ভাই আবু বকর সিদ্দীকি জামাল ও আত্মীয় আজাদ উদ্দিনের। এছাড়া মহানগর ছাত্রদলের সাবেক সহ সভাপতি রাইসুল ইসলাম সনি, সাবেক ছাত্রদল ও শিবির কর্মী ইমদাদ হোসেন, তোফায়েল আহমদ, শাকির হোসেন, কামরান হক শিপু, শাহিন আহমদ, আকিল আহমদ, আবুল কাশেম, বিতর্কিত মেলা ব্যবসায়ী আমীর আলী, বিতর্কিত ও বহিস্কৃত ছাত্রলীগ নেতা আলী হোসেন, হত্যা মামলার আসামী জয়নাল আবেদীন ডায়মন্ড, টিটু চৌধুরী, আলী আহমদ মাহিন, রঞ্জন দে, শওকত হাসান মানিকসহ আরো বেশ কয়েকজনের। যারা এই কমিটিতে সহ সভাপতি, যুগ্ম সম্পাদক থেকে শুরু করে সদস্য পর্যন্ত বিভিন্ন পদে রয়েছেন। আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমেও কয়েকজনকে কমিটিতে রাখা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তারা।

একই কথা বলেন মহানগর যুবলীগের আহবায়ক কমিটির সাবেক যুগ্ম আহবায়ক আসাদুজ্জামান আসাদ। কমিটিতে আত্মীয়-স্বজন, ছাত্রদল-শিবির থেকে অনুপ্রবেশকারী, হত্যা মামলার আসামী, চিহ্নিত চাঁদাবাজদের ঢুকিয়ে বর্তমান সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক মহানগর যুবলীগকে ধ্বংস করার পায়তারা করছেন।

কমিটি গঠনের ব্যপারে মহানগর যুবলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক কোন যোগাযোগ করেননি বলে জানান মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমদ। তিনি বলেন, যুবলীগের বেশকিছু নেতাকর্মী আমার সাথে দেখা করে পূর্ণাঙ্গ কমিটির ব্যপারে তাদের বিভিন্ন অভিযোগ করেছেন। আমরা এ বিষয়ে খোঁজ খবর নিচ্ছি।

এসব অভিযোগ অস্বীকার করে সিলেট মহানগর যুবলীগের সভাপতি আলম খান মুক্তি ও সাধারণ সম্পাদক মুশফিক জায়গীরদার বলেন, করোনা পরিস্থিতি ও যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির নির্দেশনার কারণে কমিটি করতে বিলম্ব হয়েছে। এখনো কমিটি কেন্দ্রে জমা দেননি দাবী করে তারা বলেন শোকের মাস আগস্ট শেষে আগামী সেপ্টেম্বরে কমিটি কেন্দ্রে জমা দেয়া হবে।

তারা বলেন, যুবলীগের রাজনীতিতে যারা সক্রিয় তাদেরকে দিয়েই কমিটি গঠন করা হবে। যারা এসব অভিযোগ তুলছেন তারা এই শোকের মাসে ভিত্তিহীন ও বানোয়াট গুজব ছড়াচ্ছেন। এরা মুজিব আদর্শের সৈনিক হতে পারেন না।