Main Menu

সিলেট বিএনপিতে মুখোমুখি নেতারা

নতুন করে কোন্দল দেখা দিয়েছে সিলেট জেলা বিএনপিতে। বর্তমান কমিটির ৯ সদস্য আহ্বায়ক সহ অপর সদস্যদের মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছেন। প্রকাশ্যে নিয়ে এসেছেন বর্তমান কমিটির কর্মকাণ্ডও। চলমান অবস্থার জন্য তারা দায়ী করেছেন বর্তমান আহ্বায়ক কামরুল হুদা জায়গীরদারকে। তার ‘অদক্ষ’ নেতৃত্বের কারণে সিলেট বিএনপিতে বিশৃঙ্খল অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে দাবি করেছেন আহ্বায়ক কমিটির ওই সদস্যরা। গতকাল সিলেটে এ নিয়ে সংবাদ সম্মেলনও করেছেন তারা। এদিকে, ওই ৯ সদস্যের কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জেলা বিএনপি’র কোনো সম্পর্ক নেই বলে দাবি করেছেন বর্তমান আহ্বায়ক কামরুল হুদা জায়গীরদার। গণমাধ্যমে প্রেরিত এক বিবৃতিতে তিনি তাদের ‘কতিপয় বিপথগামী’ সদস্য হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

তাদের বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ প্রয়োজনে সিদ্বান্ত গ্রহণ করবেন বলে বিবৃতিতে জানানো হয়। সিলেট জেলা বিএনপি’র বর্তমান আহ্বায়ক কমিটির বয়স এক বছরের উপরে। সিলেটে দলকে সাংগঠনিক ভাবে শক্তিশালী করতে গত বছরের অক্টোবরে আড়াই বছর বয়সী জেলা বিএনপি’র কমিটি  ভেঙে নতুন আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। আহ্বায়ক কমিটি গঠনের পর সিলেট জেলায় বিএনপিকে পুনর্গঠনের উদ্যোগ নেয়া হলেও পরবর্তীতে সেটি ঝিমিয়ে পড়ে। তবে উপজেলা, পৌরসভা সহ ১৮টি ইউনিটের পুরাতন কমিটি ভেঙে নতুন আহ্বায়ক কমিটি গঠনের উদ্যোগ নেয়া হয়। এতে করে বিভক্ত হয়ে পড়ে ২৫ সদস্যবিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি। বিএনপি নেতা আব্দুল কাইয়ূম চৌধুরী, এডভোকেট আশিক উদ্দিন, আব্দুল মান্নান, এডভোকেট এমরান আহমদ চৌধুরী, আহমেদুর রহমান চৌধুরী, নাজিম উদ্দিন লস্কর, ইশতিয়াক সিদ্দিকী, এডভোকেট হাসান পাটোয়ারী রিপন, মাহবুবুল হক চৌধুরী একাংশে অবস্থান নেন। অন্যদিকে বর্তমান আহ্বায়ক কামরুল হুদা জায়গীরদার, সাবেক সভাপতি আবুল কাহের শামীম ও সাধারণ সম্পাদক আলী আহমদ সহ আহ্বায়ক কমিটির সদস্যরা অপর অংশে অবস্থান নেন। ১৮টি ইউনিটের আহ্বায়ক কমিটিতে বর্তমান আহ্বায়কের নেতৃত্বে একাংশের নেতারা নিজেদের পছন্দের নেতাদের অন্তর্ভুক্ত করছেন বলে অভিযোগ তুলেন বিভক্ত ৯ সদস্য। ফলে আহ্বায়ক কমিটি গঠনে কয়েক মাসের মাথায় বিএনপিতে বিরোধ চরম আকার ধারণ করে। এই অবস্থায় গত ২৭শে ফেব্রুয়ারি জীবদ্দশায় নিজ বাসায় বিবদমান দুই অংশের নেতাদের নিয়ে বৈঠক করেন করোনায় মারা যাওয়া প্রয়াত নেতা এমএ হক। ওই বৈঠকে সিলেটের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী সহ কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন। তারা বিবদমান দুই অংশের  নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নেন প্রতিটি ইউনিটের আহ্বায়ক কমিটিতে আরো ৬ জন সদস্য অন্তর্ভুক্ত করা হবে। এবং আহ্বায়ক কমিটির ৯ সদস্যের মতামতকে প্রাধান্য দিয়ে প্রতিটি কমিটিতে ওই ৬ জনকে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। এটি সমন্বয়ের দায়িত্ব দেয়া হয় কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক কলিমউদ্দিন মিলনকে। গতকাল সিলেটের একটি হোটেলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ৬ সদস্যের অন্তর্ভুক্তি নিয়েও প্রশ্ন তুলেন আহ্বায়ক কমিটির ৯ সদস্য। তাদের দাবি- ‘আমরা কলিম উদ্দিন মিলনের কাছে ৬ জন করে সদস্যের তালিকা দেই। কিন্তু সাবেক কমিটির সভাপতি আবুল কাহের শামীম ও সাধারণ সম্পাদক আলী আহমদ কেন্দ্রীয় নেতা মিলনকে ব্যবহার করে চক্রান্তের মাধ্যমে ওই সদস্যের তালিকায় তাদের মনোনীত  নেতাকর্মীকে অন্তর্ভুক্ত করেন। বর্তমানে তারাই আবার একতরফা ভাবে সমন্বয় কমিটি গঠন করে বিভিন্ন এলাকায় পাঠাচ্ছে। এতে জেলা বিএনপি’র আহ্বায়ক কমিটির অনেক সদস্যই অবগত নন বলে দাবি করেন তারা।’ সংবাদ সম্মেলনে তারা বলেন- ‘বিভিন্ন উপজেলায় সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের লোকজন ঘরে বসে ইউনিয়ন কমিটি গঠন করেছেন। তাদের এই প্রক্রিয়ার কারণ হচ্ছে আগামী জেলা কাউন্সিলে যেকোনো ভাবে জয়লাভ করা। বিভিন্ন উপজেলায় কমিটি ঘোষণা করার পরও তারা নিজেদের লোকজনকে অন্তর্ভুক্ত করছে। সংগঠনের নিয়ম শৃঙ্খলার  কোনো তোয়াক্কা করছে না তারা। বিষয়টি বিএনপি’র কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিদলকে বার বার অবগত করা হলেও তারা রহস্যময় ভূমিকা পালন করছেন।’ সংবাদ সম্মেলনে তারা দাবি করেন- ‘জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি আবুল কাহের শামীম ও তার লোকজন কাউন্সিল করে আবার নেতৃত্বে আসার সর্বগ্রাসী চেষ্টা চালাচ্ছে। বর্তমান জেলা আহ্বায়ককে পকেটস্থ করে সংখ্যাগরিষ্ঠতার দোহাই দিয়ে যে কার্যক্রম চালাচ্ছেন তা সিলেটে দলকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এজন্য তারা কেন্দ্রীয় শীর্ষ নেতৃবৃন্দের সহযোগিতা কামনা করেন।’
জেলা বিএনপি’র জরুরি বিবৃতি: সিলেট জেলা বিএনপি’র ব্যানারে আহূত ‘কথিত’ সংবাদ সম্মেলনের সঙ্গে সিলেট জেলা বিএনপি’র কোনো সম্পর্ক নেই বলে জানিয়েছেন জেলা বিএনপি’র আহ্বায়ক কামরুল হুদা জায়গীরদার। গতকাল বিকালে তিনি গণমাধ্যমে প্রেরিত এক জরুরি বিবৃতির মাধ্যমে এ কথা জানান। বিবৃতিতে কামরুল হুদা জায়গীরদার বলেন, ‘কতিপয় বিপথগামী নেতাকর্মী জেলা বিএনপিতে বিভক্তি সৃষ্টি করতে সরকারের ইন্ধনে জেলা বিএনপি’র ব্যানারে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করতে যাচ্ছে। অথচ এ ব্যাপারে জেলা বিএনপি কোনো কিছু অবগত নয়। আহ্বায়ক ও আহ্বায়ক কমিটির নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আলোচনা ছাড়া কোনো বিপথগামী নেতাকর্মীর জেলা বিএনপি’র দলীয় ব্যানার ব্যবহারের ভিত্তি নেই। জেলা বিএনপি’র আহ্বায়ক কমিটি গঠনের পর থেকে কেন্দ্রীয় নির্দেশনার আলোকে জেলার আওতাধীন সকল উপজেলা ও পৌর ইউনিট কমিটি গঠন করা হয়েছে। ইতিমধ্যে উপজেলা ও পৌর কমিটি তাদের আওতাধীন ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড কমিটি গঠনের কাজ সম্পন্ন করেছে। জেলা বিএনপি’র আহ্বায়ক কমিটি একটি সুন্দর ও অর্থবহ কাউন্সিল আয়োজনের লক্ষ্যে কাজ করছে। ত্যাগী ও সক্রিয় নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন করে তৃণমূল বিএনপি পুনর্গঠনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে।’ তিনি দাবি করেন- ‘দলের এই দুঃসময়ে আওয়ামী সরকারের ইন্ধনে কতিপয় নেতাকর্মী জেলা বিএনপিতে ভাঙন সৃষ্টি করে দলীয় নেতাকর্মীদের বিভ্রান্ত করার ষড়যন্ত্র করছে। এর ধারাবাহিকতায় তারা জেলা বিএনপি’র ব্যানারে নগরীতে আজ একটি সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করতে যাচ্ছে। যা দলের গঠনতন্ত্র পরিপন্থি এবং দলের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের বহিঃপ্রকাশ। এই সংবাদ সম্মেলনের ব্যাপারে জেলা বিএনপি’র কোনো নেতাকর্মীর সম্পর্ক নেই। এতে দলীয় নেতাকর্মীদের বিভ্রান্ত না হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। বিপথগামীদের ব্যাপারে বিএনপি’র কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ প্রয়োজনে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন।’