Main Menu

সরকারের পতন ঘটাতে জামায়াত নেতাদের সঙ্গে সখ্য ছিল মামুনুল হকের

হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হক বর্তমান সরকারের পতনের মাধ্যমে ইসলামী রাষ্ট্র কায়েমের জন্য হেফাজত নেতাকর্মীদের উদ্বুদ্ধ করতেন। তিনি বিশ্বাস করেন, বর্তমান সরকারের পতন হলে কাউকে রাষ্ট্র ক্ষমতায় যেতে হলে হেফাজতের সমর্থন লাগবে। এই মিশনে তিনি আফগান ফেরত মুজাহিদ ও জামায়াত নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন। গোয়েন্দা পুলিশ কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদে তিনি এ সব কথা বলেছেন।

এদিকে রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানায় করা মোবাইল চুরির মামলায় গ্রেফতার মামুনুল হককে সাতদিন রিমান্ডে নেওয়ার অনুমতি দিয়েছে আদালত। গোয়েন্দা পুলিশের একজন কর্মকর্তা বলেন, হেফাজতের মধ্যে অন্যতম ‘উগ্রপন্থী’নেতা মামুনুল হক। তিনি যেকোনো মূল্যে এই সরকারের পতন ঘটাতে চেয়েছেন। পরের দুই স্ত্রীর বিষয়ে জানতে চাইলে গোয়েন্দাদের জিজ্ঞাসাবাদে মামুনুল হক বলেছেন, তিনি পরের দুইজনকে বিয়ে করেননি। তবে দুইজন সাক্ষীর উপস্থিতিতে তাদের সঙ্গে পৃথকভাবে মামুনুলের চুক্তি হয়েছিল। এই চুক্তির কপিও উদ্ধার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ। চুক্তিতে বলা হয়েছে, মামুনুল হক তাদের বিয়ে করবেন না। স্ত্রীর মর্যাদাও দেবেন না। তবে তাদের ভরণপোষণ দেবেন। এই শর্তে যে, তিনি স্ত্রীর মতো করে তাদের সঙ্গে মিশবেন। যেখানে যেতে বলবেন, সেখানে যেতে হবে এবং তার সঙ্গে রাত্রিযাপন করতে হবে।

গোয়েন্দা পুলিশের ওই কর্মকর্তা বলেন, মামুনুল হকের কাছে তারা জানতে চেয়েছিলেন, বিয়ে না করে কারো সঙ্গে চুক্তি করে থাকা যায় কি-না? জবাবে মামুনুল হক তাদের বলেছেন, এই শরীয়ত সম্মত। তিনি স্ত্রীর মর্যাদা না দিলেও তাদের ভরণপোষণ দিচ্ছেন। তার বিনিময়ে তারা তাকে সঙ্গ দিচ্ছেন। এটা ইসলামের বিধিবিধানের মধ্যেই তিনি করেছেন বলে দাবি করেছেন। তবে এই পরিস্থিতিতে সোনারগাঁওয়ের রিসোর্টে যাওয়া তার ঠিক হয়নি। আর গেলেও আগে থেকে প্রস্তুতি নিয়ে নেতাকর্মীদের জানিয়ে যাওয়া উচিৎ ছিল।

সরকারের পতনের বিষয়ে তাদের পরিকল্পনার বিষয়ে জানতে চাইলে গোয়েন্দাদের এই হেফাজত নেতা বলেন, ইসলামি রাষ্ট্র কায়েম করতে হবে এই সরকারের পতন ঘটাতেই হতো। আর এই সরকার পড়ে গেলে হেফাজতের অনুগ্রহ ছাড়া কেউ রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসতে পারবে না। এই কারণে তিনি রাজধানীর যেকোনো কর্মসূচিতে সহিংসতার উস্কানি দিতেন। তার মতে, হেফাজতের আমীর জুনায়েদ বাবুনগরীর চেয়েও বেশি ‘উগ্রপন্থী’তিনি। অন্য নেতাদের দিয়ে বিপ্লব হবে না। এই কারণে তিনি নিজেই দায়িত্ব নিয়ে নানা আন্দোলন সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়েছেন।

এদিকে সোমবার ঢাকা মহানগর হাকিম দেবদাস চন্দ্র অধিকারীর আদালতে হাজির করা হয় মামুনুল হককে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদপুর থানার এসআই সাজেদুল হক আসামিকে সাতদিন রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করেন। এ সময় প্রথমে রাষ্ট্রপক্ষে ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর আব্দুল্লাহ আবু আসামিকে সাতদিন রিমান্ড মঞ্জুরের প্রার্থনা করেন। পরে আসামির পক্ষে জয়নুল আবেদীন মেজবা রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিন আবেদন করেন। পরে বিচারক মামুনুল হকের কাছে জানতে চান তার কিছু বলার আছে কি না।

তখন মামুনুল হক আদালতে বলেন, স্যার, আমাকে গ্রেফতার করে গতকাল যেখানে রাখা হয়েছিল সেটি থাকার মতো জায়গা না। ওই রকম জায়গায় ইবাদত করা যায় না। অন্যান্য রমজানে আমি নিয়মিত কোরআন খতম করি। রিমান্ডে পাঠালে সুষ্ঠু পরিবেশ থাকবে না এবং আমার ইবাদত করা কঠিন হয়ে যাবে। গ্রেফতারের পর আমাকে অনেক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। আমাকে রিমান্ড দিয়েন না। এ মামলার বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। শুনানি শেষে মামুনুলের ইবাদতে যেন বিঘ্ন না হয় সেদিকে খেয়াল রাখার নির্দেশ দিয়ে আদালত ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

আদালতে দাখিল করা রিমান্ড আবেদনে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, মাওলানা মামুনুল হক এবং তার ভাইয়ের নির্দেশে অন্যান্য আসামিরা এ মামলার বাদির একটি স্যামসাং এ-৫০ মডেলের মোবাইল, নগদ ৭ হাজার টাকা, ২০০ ইউএস ডলার, ব্র্যাক ব্যাংকের একটি ডেবিট কার্ডসহ মানিব্যাগ চুরি করে নিয়ে যায়। গত বছরের ৬ মার্চ রাত সাড়ে ৮টার দিকে মোহাম্মদপুর সাত গম্বুজ মসজিদে আমল করাকালীন মামুনুল হক এবং তার ভাই মোহতামিম মাহফুজুল হকের নির্দেশে জামিয়া রহমানিয়া আরাবিয়া মাদ্রাসার ছাত্র ওমর ও ওসমান এ মামলার বাদি জি এম আলমগীর শাহিনসহ অন্যদের আমল করতে বাঁধা দেয়।

আবেদনে আরও বলা হয়েছে, তাদের ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত করে এবং মসজিদ থেকে বের হয়ে যেতে বলে। রাত ৮টা ৪০ মিনিটের দিকে আসামি ওমর, ওসমান, শাহিন, মাওলানা আনিস, জহির মসজিদে এসে বাদিসহ তার সঙ্গে থাকা অন্যদের কিল-ঘুষি মারে। মামুনুল হক এবং তার ভাইয়ের নির্দেশে মাদ্রাসার আরও প্রায় ৭০/৮০ জন এসে তাদের আবারও মারধর করে। বাদি জি এম আলমগীর শাহিনের একটি স্যামসাং মোবাইল, ৭ হাজার টাকা, ২০০ ইউএস ডলার, ব্র্যাক ব্যাংকের একটি ডেবিট কার্ডসহ বাদির মানিব্যাগ নিয়ে যায় আসামিরা।

তদন্ত কর্মকর্তা আদালতকে জানান, প্রাথমিকভাবে মামুনুল হকের বিরুদ্ধে এ মামলার ঘটনায় জড়িত থাকার সাক্ষ্য-প্রমাণ পাওয়া গেছে। এ আসামি ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে রাষ্ট্রবিরোধী বিভিন্ন বক্তব্যের মাধ্যমে মুসলমান ও মাদরাসা ছাত্রদের উষ্কে দেয়। আসামির বিরুদ্ধে বাংলাদেশের বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। মামলার সুষ্ঠু তদন্ত, এজাহারনামীয় পলাতক অন্য আসামিদের গ্রেফতার, অজ্ঞাত আসামিদের নাম-ঠিকানা সংগ্রহ ও তাদের শনাক্তপূর্বক চোরাই যাওয়া মালামাল উদ্ধারের লক্ষ্যে তার ৭ দিনের রিমান্ড প্রয়োজন।

মামলা সূত্রে জানা গেছে, আসামিরা বেআইনি সংঘবদ্ধ হয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে বাদিকে এলোপাথাড়ি মারধর করে গুরুতর আঘাত করে। এ ঘটনায় রাজধানীর মোহম্মদপুরের চাঁন মিয়া হাউজিংয়ের ৪১/৪০ নম্বর বাসার বি/১ ফ্লাটের বাসিন্দা জি এম আলমগীর শাহীন বাদি হয়ে ৬ মার্চ মামলা করেন।