Main Menu

যুদ্ধবিধ্বস্ত কাশ্মীরে নারী ফুটবল যোদ্ধার লড়াই

দৃশ্যটা কিঞ্চিত বেমানানই বটে। যুদ্ধ বিধ্বস্ত কাশ্মীরে মানুষ যেখানে বেঁচে থাকার সংগ্রামে ব্যস্ত, সেখানে এক নারী ফুটবল হাতে অন্য এক লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন। মাত্র ২৪ বছর বয়সেই যিনি কাশ্মীরের প্রথম নারী ফুটবল কোচ। তার অনুশীলনে নানা বয়সী মেয়েদের আনাগোনা। তারাও হতে চান আরেকজন নাদিয়া নাইট। নাদিয়ার জন্য অবশ্য এই পথটুকু পাড়ি দেয়াটা মোটেই সহজ ছিল না। নানা প্রতিবন্ধকতা বারবার তার সামনে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে কিন্তু ফুটবলের প্রতি ভালোবাসা তাকে দমিয়ে রাখতে পারেনি।

নিজের অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিতে গিয়ে নাদিয়া বলেন, সত্যি কথা বলতে আমি বিমর্ষ হয়ে পড়তাম, কারণ পারিবারিক চাপ ও অপমানের বোঝা। কিন্তু তারপরও চেষ্টা করা থেকে কখনো সরে আসিনি। আমরা নিজেদের জীবনের জন্য কিছু শেখার জন্য খেলি। আমার স্বপ্ন হচ্ছে আমার খেলোয়াড়দের যতটা সম্ভব প্রশিক্ষিত করে তোলা, তা সে লিঙ্গেরই হোক না কেন।

এখন অন্য নারীদের পথ দেখানোর কাজে নিজেকে ব্যস্ত রাখলেও, ভুলেননি নিজের সময়ে শোনা সেই কটাক্ষগুলো। প্রতিটি ক্ষেত্রে তাকে পড়তে হয়েছিল বিরোধিতার মুখে। নাদিয়া বলেন, আমার মনে পড়ে ২০১৩ সালে আমি শ্রীনগর পলো গ্রাউন্ডের ফাইনাল খেলতে পারিনি। ছেলেদের দলে আমার অন্তর্ভূক্তি নিয়ে প্রতিপক্ষ দল প্রশ্ন তুলেছিল। আমি খেলতে পারিনি এবং সেই মুহূর্তটি আমাকের হাতশায় নিমজ্জিত করেছিল। সে সময়টাতে আমি খুব যন্ত্রণা বোধ করতাম, যখন মানুষ আমাকে নিয়ে মন্তব্য করতো। কিন্তু পরিস্থিতি বদলেছে। সেই মানুষগুলোয় এখন আমার কাজের প্রশংসা করে।

মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে উঠে আসা নাদিয়াকে পারিবারিকভাবেও বাধার মুখে পড়ে হয়েছিল। খেলাধুলার জন্য মায়ের পিটুনিও খেতে হয়েছিল তাকে, যা সে অঞ্চলের বাস্তবতায় খুব অস্বাভাবিকও ছিল না। কিন্তু সেই বাবা-মাই এখন নাদিয়াকে নিয়ে তার অর্জনের জন্য গর্ববোধ করেন।

তিনি বলেন, যখনই আমি কয়েক ঘণ্টার জন্য বাইরে যেতাম আমার মা প্রায়শই আমাকে খুঁজতে বের হতেন। ছেলেদের খেলার কারণে তিনি আমাকে মেরেছেনও। কিন্তু এখন সব বদলে গেছে। আমি যা করছি তার জন্য আমি সমর্থন পাচ্ছি।

তার বাবা মোহাম্মদ সিদ্দিক বাটলু বলেন, যে কঠিন পথ পাড়ি দিয়ে সে এত দূর এসেছে, তাতে আমি আনন্দিত। যেভাবে সে লড়াই করেছে তাতে আমি গর্বিত।

মূলত ২০০৭ সালের গ্রীস্মে মোহাম্মদ আবদুল্লাহ নামে এক কোচের চোখে পড়েন নাদিয়া। এরপর তাকে আবদুল্লাহ অমর সিং কলেজে আমন্ত্রণ জানান। যেখানে একাডেমিতে যোগ দিয়ে আরো ৪৭ জন ছেলের সঙ্গে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। সেখান থেকেই তার স্বপ্ন যাত্রার শুরু। নাদিয়া বলেন, আমি আবদুল্লাহর কাছে ঋণী। আমার মনে আছে, তিনি আমাকে বলেছিলেন, ছেলেদের বাদ দিয়ে হলেও তিনি আমাকে প্রশিক্ষণ দেয়া অব্যাহত রাখবেন।

আন্তর্জাতিক ফুটবলে তার অনুপ্রেরণা জুভেন্টাসের পর্তুগিজ সুপারস্টার ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। যখনই কোথাও উন্নতির প্রয়োজন তিনি ইউটিউবে রোদালদোর ভিডিও দেখে শিখে নিতেন। নিজে শিখতে শিখতে এখন শেখাচ্ছেন অন্যদের, ছড়িয়ে দিচ্ছেন নিজের স্বপ্ন।

দ্য গার্ডিয়ান