Main Menu

যুক্তরাজ্য তহবিল কমানোয় বিপাকে ব্র্যাক

অংশীদারত্বের ভিত্তিতে ১০ বছর ধরে ‌৪৫০ মিলিয়ন পাউন্ড সহায়তা দেওয়ার পর যুক্তরাজ্যের তহবিল হ্রাসের সিদ্ধান্ত বিশ্বের সর্ববৃহৎ বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাকে ‌‘বিপর্যয় ডেকে আনবে’ বলে মন্তব্য করেছেন প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ।

ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ানকে তিনি বলেছেন, যুক্তরাজ্যের তহবিল হ্রাসের এই সিদ্ধান্তে লাখ লাখ নারী শিক্ষার্থী শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হবে, লাখ লাখ নারী ও মেয়ে পরিবার পরিকল্পনার সুবিধা পাবেন না এবং চরম দারিদ্র্য হবেন লাখো মানুষ।

সদ্যসমাপ্ত বিশ্বের শিল্পোন্নত দেশগুলোর জোট জি-৭ এর সম্মেলনে গত শুক্রবার যুক্তরাজ্য ৯০ দেশে মেয়েদের শিক্ষার জন্য অতিরিক্ত ৪৩০ মিলিয়ন ব্যয় করবে বলে ঘোষণা দেওয়ার পরই ব্র্যাকের প্রধান আসিফ সালেহ বিষয়টি নিয়ে এমন মন্তব্য করেছেন।

শিশু অধিকার নিয়ে কর্মরত আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা সেভ দ্য চিলড্রেনের হিসাব বলছে, যুক্তরাজ্য সরকার ২০১৯-২০ সালের তুলনায় ২০২০-২১ সালে শিক্ষাখাতে সহায়তা ৩৬ শতাংশ, মানবিক সহায়তায় ৪৫ শতাংশ এবং পানি ও স্যানিটেশনে ৪৫ শতাংশ কমিয়েছে।

আসিফ সালেহ বলেছেন, ‘আচমকা তহবিল হ্রাসের সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিত। পেটে ঘুুষি মারার মতো। আমরা ভাবতেও পারিনি তারা এই অংশীদারত্ব সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করে নেবে। আর পাঁচ বছরে ২০০ মিলিয়নের প্রতিশ্রুতি একদম কিছু না। কোথাও একটা ভুল হচ্ছে।’

বিশ্বজুড়ে শিক্ষা সংকট ও আন্তর্জাতিক তহবিল কমানোর মধ্যে যুক্তরাজ্যের এই তহবিল বরাদ্দকে ‘সমুদ্রের মধ্যে এক ফোঁটা পানি’ বলে অভিহিত করেছেন শিশুদের নিয়ে কাজ করা লন্ডনভিত্তিক বৈশ্বিক দাতব্য সংস্থা ‘দেয়ারওয়ার্ল্ড’র প্রধান সারাহ ব্রাউন।

তহবিল কর্তন নিয়ে ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট কমিটির তদন্তে ব্র্যাক যেসব প্রমাণপত্র দাখিল করেছে তাতে দেখা যাচ্ছে, যুক্তরাজ্যের এই সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের সেসব মানুষের জন্য বিপর্যয় ডেকে আনবে, যারা দিনে এক ডলারের কম রোজগার দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন।

করোনাভাইরাস মহামারির প্রাদুর্ভাব শুরুর পর বাংলাদেশের এক কোটি ৬০ লাখ মানুষের নাম উঠেছে চরম দারিদ্র্যের কাতারে এবং বিশ্বব্যাংক তাদের পূর্বাভাসে জানিয়েছে, কোভিডের কারণে ২০২০ সালের মধ্যে বিশ্বজুড়ে চরম দারিদ্র্যের কাতারে আরও ১৫ কোটি মানুষের নাম উঠবে।

যুক্তরাজ্যের সহযোগিতায় ব্র্যাক সর্ববৃহৎ উপ-আনুষ্ঠানিক স্কুল কর্মসূচি পরিচালনা করে আসছে বাংলাদেশে। এই স্কুল কর্মসূচির আওতায় পড়ালেখা করছে এক কোটি ২০ লাখের বেশি শিশু। ব্রিটিশ সহযোগিতায় বিশ্বজুড়ে বিখ্যাত ‘গ্রাজুয়েশন মডেল’ তৈরি করা হয়েছে।

আসিফ সালেহ বলেন, ‘কিছু কর্মসূচি ৯০ দিনের নোটিশে বন্ধ করে দিতে হচ্ছে। আমরা শূন্যস্থান পূরণের চেষ্টা করছি। কোভিডের কারণে স্বাস্থ্য কর্মসূচি চলমান রয়েছে। তবে অতি-দরিদ্রদের শিক্ষা কর্মসূচি ছাড়াও আমাদের শিক্ষা কর্মসূচির পরিসর ছোট করে দেওয়া হচ্ছে।’

তহবিল সংকটে ব্র্যাকের বিরুপ পরিস্থিতির উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমাকে কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে। যখন আমি স্কুল শুরু করতে সক্ষম হচ্ছি না, যখন আমাকে বাল্যবিবাহ বন্ধ করার কর্মসূচি বন্ধ করে দিতে হচ্ছে; তখন এসব মানুষের কাছে এটা বিশ্বাসঘাতকতা মনে হবে।’

ব্র্যাকের প্রধান বলেন, ‘এভাবে তহবিল কর্তন ভুল বার্তা দেয়। বৈশ্বিক উন্নয়নের চালিকাশক্তি হয়ে ওঠার আশ্চর্যজনক সুনাম যুক্তরাজ্যের ঝেড়ে ফেলা উচিত নয়। যুক্তরাজ্য অনেক বড় বন্ধু। এক্ষেত্রে আরও চিন্তাভাবনা করা প্রয়োজন। এখানে অনেক মানুষের জীবন জড়িত।’

ব্র্যাকের সঙ্গে যুক্তরাজ্যের এই স্ট্র্যাটেজিক পার্টনারশিপ অ্যারেঞ্জমেন্টের (এসপিএ) বিষয়টি দেখভাল করে দেশটির ফরেন কমনওয়েলথ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অফিস (এফসিডিও)। গার্ডিয়ান এ নিয়ে মন্তব্যের জন্য এফসিডিও’র সঙ্গে যোগাযোগ করলেও সাড়া পায়নি।