মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ জিম্মি থাকতে পারে না
মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ কারো হাতে জিম্মি থাকতে পারে না সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে গণমাধ্যমে এমনই বিবৃতি দিয়েছেন সমাজের ১১ বিশিষ্ট ব্যক্তি। বুয়েট ছাত্র আবরার হত্যা ও সম্প্রতি যুবলীগের নানা অপরাধের সাতকাহন প্রকাশ হলে তার প্রেক্ষিতে তারা এ বিবৃতি দেন।
অধ্যাপক আনিসুজ্জামান, আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী, সৈয়দ হাসান ইমাম, হাসান আজিজুল হক, অনুপম সেন, সারোয়ার আলী, রামেন্দু মজুমদার, ফেরদৌসী মজুমদার, মামুনুর রশীদ, মফিদুল হক এবং বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা ও নাট্যব্যক্তিত্ব নাসির উদ্দীন ইউসুফ উক্ত বিবৃতিতে সই করে বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোবর) বিভিন্ন গণমাধ্যমে পৌঁছে দেন।
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘এক গভীর উৎকণ্ঠা ও অসীম বেদনায় নিমজ্জিত আজ পুরো জাতি। বুয়েট শিক্ষায়তনে সহপাঠী আবরার ফাহাদকে একদল ছাত্রলীগ কর্মী কতৃক নির্মমভাবে হত্যা।
সাম্প্রতিক সময়ে যুবলীগ নামক যুব সংগঠনের সামজিক অনাচার, মাদক ব্যবসা ও দুর্নীতির অবিশ্বাস্য নিদর্শন আমাদের দারুণভাবে হতাশ ও ক্ষুব্ধ করেছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান প্রতিষ্ঠিত ছাত্র ও যুব সংগঠনের এ বিপথগামীতা আমাদের হতাশ ও ব্যথিত করে।
সাম্প্রতিক সময়ের ঘটনা সমূহ প্রমাণ করে রাজনৈতিক দলের আদর্শ বিহীন দেউলিয়া চরিত্র। আমাদের রাজনৈতিক দলগুলো সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ তাদের ছাত্র, যুব ও দলীয় কর্মীদের নিয়ন্ত্রণ করতে। শুধু তাই নয়, কোনো প্রকার আদর্শের ভিত্তিতে দল ও অঙ্গ সংগঠন পরিচালনা না করে শুধু পেশীশক্তি-নির্ভর দল গঠন ও পরিচালনা কী ভয়াবহ পরিণতি আনয়ন করে তা আজ সবার সামনে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
আবরার হত্যার শুধুমাত্র দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির মাঝে আমাদের এ ভয়াবহ সংকট নিরসন হবে বলে আমরা বিশ্বাস করি না। আমরা মনে করি মানবিক মূল্যবোধের যে ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ আজ জাতিকে গ্রাস করেছে, তা থেকে মুক্তি পেতে হলে সরকার, শাসক দল ও সকল রাজনৈতিক দলকে নিজ নিজ দল, অঙ্গ সংগঠন, সরকার ও প্রশাসনের অভ্যন্তরে মানবিক মূল্যবোধ ও সহনশীল-সংস্কৃতির বীজ উপ্ত করতে হবে।
বিশেষ করে সরকার ও সরকারি দলকে এ কাজে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। অন্যথায় জাতি এক ভয়াবহ দুর্যোগের মুখোমুখি হবে।
কতিপয় উচ্ছৃঙ্খল-আদর্শহীন যুব ও ছাত্র সংগঠনের হাতে মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ জিম্মি থাকতে পারে না। আমরা অতি দ্রুত এই সংকট থেকে জাতি ও দেশকে রক্ষা করতে সরকারের আশু পদক্ষেপ প্রত্যাশা করি। একই সঙ্গে জনগণকে সচেতন ভূমিকা রাখার আহ্বান জানাই।’