Main Menu

ভয়কে উপেক্ষা করেই অবৈধভাবে ইউরোপে ঢোকার চেষ্টা

নভেল করোনাভাইরাস গ্রাস করছে পুরো বিশ্বকে। এই মুহূর্তে সবাইকে ঘরেই অবস্থানের পরামর্শ দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। তবে এ কথা শুনছেন না অভিবাসন প্রত্যাশীরা। তারা সংক্রমণের ভয়কে উপেক্ষা করেই তিউনিসিয়া হয়ে ছুটছেন ইউরোপের দিকে। অবশ্য এদের মধ্যে একটি বড় অংশই শরণার্থী হিসেবে ইউরোপে ঢুকতে চাইছে।

ইতালিতে গত কয়েকদিনে সংক্রমণের হার অনেকটাই কমে গেছে। তবু সতর্ক অবস্থানে রয়েছে ইউরোপের দেশটি। ইতালি বলছে, তাদের বন্দরগুলো এখনো কভিড-১৯ ঝুঁকিমুক্ত হয়নি। কিন্তু তাদের সতর্কবার্তা শুনছে না অভিবাসন প্রত্যাশীরা। অবৈধভাবে দেশটিতে ঢোকার চেষ্টায় মরিয়া মধ্যপ্রাচ্যসহ এশিয়া ও আফ্রিকার বিভিন্ন দেশের মানুষ।

এমনি উষ্ণ আবহাওয়া বোটে করে অবৈধ পথে সাগর পারি দেয়া বেশ বিপজ্জনক। তবে গেল কয়েকদিন ধরে আবহাওয়া কিছুটা অনুকূলে হওয়ায় পাচারকারী চক্র এ সময়টা কাজে লাগাতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। তবে তৎপর তিউনিসিয়ার কোস্টগার্ডও। তাদের সতর্ক পাহারার কারণে গত কয়েকদিন পাচারকারীদের বেশ কয়েকটি প্রচেষ্টা ভন্ডুল হয়ে গেছে এবং ইতালিগামী বহু অভিবাসন প্রত্যাশীকে আটকে দেয়া দেয়া হয়েছে।

তিউনিসিয়া কোস্টগার্ডের মুখপাত্র হুসেম এডিন জেবাবলি জানান, এসফাক্স ও নাবুয়েল রাজ্য থেকে বেশ কিছু মানুষকে আটকানো হয়েছে যারা ইঞ্জিনচালিত ও ডিঙ্গি নৌকায় করে ইতালির সিসিলি যাওয়ার চেষ্টা করছিল।

এসফাক্স রাজ্যের এল আমরা কোস্টগার্ড ইউনিট জানায়, স্থানীয় এক জেলের চুরি হয়ে যাওয়া নৌকা আটক করেন তারা, যে নৌকায় ২০ থেকে ২৯ বছর বয়সী ৪০ জন মানুষ ছিলেন, যারা সবাই এসেছেন তিউনিস ও এসফাক্স থেকে। এর মধ্যে ছোটখাটো অপরাধে জড়িত থাকায় পাঁচজনকে নিজেদের জিম্মায় নেয় পুলিশ। নৌকা থেকে কিছু বিদেশি মুদ্রাও উদ্ধার করা হয়েছে। ধারণা করা হয়, অভিবাসী প্রত্যাশীরা এসব বিদেশি মুদ্রা পাচারকারী চক্রকে দিয়েছিল তাদের সাহায্য করার জন্য।

আটজনকে আটকের খবর নিশ্চিত করেছে তিউনিসিয়ার কৌঁসুলি। বাকিদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র গঠন করা হয়েছে। কেরকেন্নাহ দ্বীপের সিদি ইউসেফের কোস্টগার্ড এসফাক্স ও গাবেস অঞ্চলের ২০ থেকে ৩২ বছর বয়সী আটজনকে গ্রেফতার করে। তাদের কাছে ১৬ হাজার তিউনিসিয়ান দিনার পাওয়া গেছে। এই আটজনের বিরুদ্ধে আদম পাচারের প্রস্তুতি নেয়ার জন্য অভিযোগপত্র গঠন করা হয়েছে।

এছাড়া নাবুয়েল রাজ্যের কোস্টগার্ড করবা অঞ্চল থেকে ২১ জন অভিবাসীকে বহনকারী একটি নৌকা আটক করার খবর নিশ্চিত করেছে। এসব অভিবাসন প্রত্যাশীদের বেশিরভাগই নাইজেরিয়ার।

ইন্টারসস চ্যারিটির মুখপাত্র আরব নিউজকে বলেন, ‘অভিবাসন প্রত্যাশীরা বলছে, উত্তর আফ্রিকা থেকে ইউরোপ যেতে তারা তাদের সব অর্থ খরচ করে ফেলেছেন। এখন তারা মরিয়া। আমরা নিশ্চিত, কোনো সুযোগ পেলে শিগগিরই তারা ইতালি পৌঁছানোর চেষ্টা আবারো করবে।’

তিউনিসিয়ান কর্তৃপক্ষের চেষ্টার পরও বহু মানুষ এ পথটি দিয়ে ইতালি হয়ে ইউরোপে ঢুকতে মরিয়া। ইতালির পুলিশ জানায়, বুধবার লামপেদুসা দ্বীপ থেকে ১০ মাইল দূরবর্তী সাগরে ভাসমান ডিঙ্গি নৌকা থেকে ৭১ জন তিউনিস নাগরিককে নামিয়ে দ্বীপের অভ্যার্থনা সেন্টারে নিয়ে যাওয়া হয়।

ইতালির উত্তর পশ্চিম অঞ্চলের শহর ভেনতিমিলিয়ায় ক্যাথোলিক চ্যারিটি কারিতাস ইনতেমিলিয়া জানায়, অভিবাসীরা (মূলত আফগানিস্তান থেকে আসা) ফ্রান্সের সীমান্তবর্তী অঞ্চলে অবস্থান করছে। অভিবাসীদের সামাজিক-আইনগত সাহায্য দেয়া এই সংস্থাটি সম্প্রতি তাদের অফিস পুনরায় খুলেছে। তারা জানায়, ফরাসি কর্তৃপক্ষ সীমান্তে বেশ কড়াকাড়ি আরোপ করেছে এবং সন্তানসহ মাকে ইতালির দিকে ফেরত পাঠিয়েছে। সংস্থাটি জানায়, কভিড-১৯ মহামারীতে ফ্রান্স অপেক্ষাকৃত নিরাপদ থাকায় অভিবাসী প্রত্যাশীরা সেখানেই যেতে চাইছেন।

কারিতাসের পরিচালক মাউরিজিও মারমো বলেন, ‘ইতালি সরকারের নতুন আইনের সাপেক্ষে আমরা এসব অভিবাসন প্রত্যাশীদের কাগজপত্র পরীক্ষা করে দেখব তাদের কেমন আইনগত সাহায্য দেয়া যায়।’ তিনি আরো বলেন, ‘গত দুই মাসে খুব কম মানুষই ইতালি-ফ্রান্স সীমান্ত অতিক্রম করেছেন। কিন্তু আমাদের সেন্টারটি মানুষে পরিপূর্ণ। স্বাস্থ্যগত বিধিনিষেধের কারণে আমাদের রান্নাঘর এখনো বন্ধ রয়েছে, তবু এসব মানুষের জন্য আমাদের খাবার সরবরাহ করে যেতে হচ্ছে।’

পার্কো রোজা অভিবাসী সেন্টারের খবরও জানার চেষ্টা করছে কারিতাস। একজন অভিবাসী কভিড-১৯ পজিটিভ হওয়ার পর পুরো সেন্টারটি কোয়ারেন্টিন করে দেয়া হয়েছে।

সূত্র: আরব নিউজ