Main Menu

‘ভুল বোঝাবুঝির’ অবসান ঘটাতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বাসায় হেফাজত নেতারা

বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আসার বিরোধীতা করে কর্মসূচি পালন করে হেফাজতে ইসলাম। আর এ কর্মসূচি পালন করতে গিয়েই সরকার ও হেফাজতের মধ্যে যে ‘ভুল বোঝাবুঝি’ সৃষ্টি হয়েছে তার অবসান ঘটাতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেছেন সংগঠনটির শীর্ষ কয়েকজন নেতা।

একইসঙ্গে বৈঠকে করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী বন্ধ থাকা কওমি মাদরাসাগুলো খুলে দেওয়া নিয়েও আলোচনা হয়। একাধিক হেফাজত নেতার সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য জানা গেছে।

হেফাজতের একাধিক নেতার দাবি, সোমবার (১৯ এপ্রিল) রাতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সঙ্গে ঘণ্টাব্যাপী বৈঠকের আলোচনায় সুনির্দিষ্ট কোনো এজেন্ডা ছিল না। বৈঠকে হেফাজতের নেতাদের চলমান গ্রেফতার, মোদি কর্মসূচি চলাকালে সারাদেশের জ্বালা-পোড়াও, থানায় হামলা, কওমি মাদরাসা খুলে দেওয়া নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

বৈঠকের এক পর্যায়ে সরকারের পক্ষ থেকে মোদিবিরোধী হেফাজতেরে কর্মসূচি ও হরতালে সারাদেশে যে জ্বালা-পোড়াও এবং থানায় হামলা হয়েছে সে প্রসঙ্গটি সামনে আনা হয়। তখন বৈঠকে উপস্থিত হেফাজতের নেতারা পরিষ্কার করে বলেন যে- সারাদেশের জ্বালা-পোড়াওয়ের সঙ্গে সংগঠনের কোনো সংশ্লিষ্টতা ছিল না। তৃতীয় কোনো পক্ষ এটা করেছে। সরকার সঠিকভাবে তদন্ত করলে বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যাবে। এ করে দু’পক্ষের মধ্যে যে ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়েছে তারও অবসান ঘটবে।

হেফাজতের দুই নেতা জানান, বৈঠকে হেফাজতের পক্ষ থেকে সুনির্দিষ্ট করে কোনো দাবি-দাওয়া তুলে ধরা হয়নি। কিন্তু রমজানের মধ্যে গণহারে আলেম-ওলামাদের গ্রেফতারের বিষয়টি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নজরে আনা হয়। তা বন্ধ করতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে উদ্যোগ নিতেও আহ্বান জানানো হয়। তিনিও বিষয়টি দেখবেন বলেছেন, একইসঙ্গে কওমি মাদরাসাগুলো খুলে দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয় হেফাজতের পক্ষ থেকে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হেফাজতের এক নেতা বলেন, হেফাজতের সঙ্গে সরকারের কিছু ভুল বোঝাবুঝি ছিল। বৈঠকে সেইগুলো ক্লিলিয়ার করেছি। এখানে কোনো দাবি-দাওয়া বা আশ্বাস-বিশ্বাস ছিল না। আমাদের পক্ষ থেকে পবিত্র রমজানে আলেমদের গণহারে গ্রেফতার বন্ধ এবং কওমি মাদরাসাগুলো খুলে দেওয়ার বিষয়টি আলোচনায় তুলে ধরা হয়েছে। এ রকম বৈঠক সামনে আরও হতে পারে।

তিনি আরও বলেন, বৈঠকে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে হরতালে আপনারা সারাদেশে এই করেছেন, ওই করেছেন। আমরা বলেছি, এগুলো হেফাজতের কাজ না। তৃতীয় কোনো পক্ষ করেছে। হেফাজত কোনো রাজনৈতিক সংগঠন না। রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনও আমাদের কাজ না।

এদিকে ঘণ্টাব্যাপী চলা ওই বৈঠকের বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি হেফাজতের মহাসচিব মাওলানা নুরুল ইসলাম ও নায়েবে আমির মাওলানা মাহফুজুল হক।

অন্যদিকে বৈঠকের বিষয়ে একাধিকবার যোগাযোগ করেও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর আসাদুজ্জামান খান কামালের বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। তবে তিনি বৈঠকের বিষয়ে একটি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমি কিছুই জানি না। হঠাৎ করেই তারা (হেফাজতের নেতারা) বাসায় এসে হাজির হন। তারা দাবি জানান, হেফাজত নেতাদের যাতে গণগ্রেফতার না করা হয়। আমি তাদের বলেছি, কোনো গণগ্রেফতার হচ্ছে না। যারা অপরাধের সঙ্গে জড়িত, ঠিক তাদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। পাশাপাশি করোনার কারণে বন্ধ কওমি মাদরাসা খুলে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা।’

সূত্রে জানা যায়, দুই পক্ষ চেয়েছে বলেই এ বৈঠক হয়েছে। তবে উদ্যোগের উদ্যোক্তা ছিল হেফাজতের এক নেতা। যার সঙ্গে আগে থেকেই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রাণালয়ের সুসম্পর্ক ছিল।

সোমবার (১৯ এপ্রিল) রাত ১০টার দিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সঙ্গে তার ধানমন্ডির বাসায় হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব মাওলানা নুরুল ইসলাম, হেফাজতের নায়েবে আমির মাওলানা মাহফুজুল হক, হেফাজতের নেতা ও খেলাফত আন্দোলনের আমির মাওলানা আতাউল্লাহ হাফেজ্জী, তার ভাতিজা মাওলানা হাবিবুল্লাহ মিয়াজীসহ ছয় থেকে সাতজন নেতা বৈঠক করেছেন।