Main Menu

ব্রিটেনের রাজসিংহাসনে রাণীর ৭০ বছর

সিংহাসনে সুদীর্ঘ সময়। বিশ্বের ১৬টি সার্বভৌম রাষ্ট্র এবং কমনওয়েলথের প্রধান হিসেবে গোটা বিশ্বে আগ্রহের কারণ। ব্রিটেনের অনন্য প্রতিচ্ছবি জীবন্ত কিংবদন্তি রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ। সিংহাসনে হীরকজয়ন্তীর মাইলফলক স্পর্শ করে অনন্য নিদর্শন স্থাপন করেছেন ইতিমধ্যেই। ১৯৫২ সালে ব্রিটেনের সিংহাসনে আরোহণ করেন তিনি। রাজসিংহাসন শাসনে ৭০ বছরে পা দিয়েছেন মহারানী। এই দীর্ঘ সময়ে তাঁর জনপ্রিয়তায় এতটুকু ভাটা পড়েনি। রানীর ব্যক্তিজীবনের নানা দিক নিয়ে আমাদের আয়োজন।

জীবন্ত কিংবদন্তি

ব্রিটেনের দ্বিতীয় এলিজাবেথ হচ্ছেন বিশ্বের ১৬টি সার্বভৌম রাষ্ট্র, অর্থাৎ কমনওয়েলথ রাষ্ট্রগুলোর বর্তমান রানী ও রাষ্ট্রপ্রধান। কমনওয়েলথ রাষ্ট্রগুলো হলো-যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, পাপুয়া নিউগিনি, নিউজিল্যান্ড, জ্যামাইকা, বারবাডোস, বাহামাস, গ্রানাডা, সলোমন দ্বীপপুঞ্জ, টুভালু, সেন্ট লুসিয়া, সেন্ট ভিনসেন্ট ও গ্রেনাডাইন, বেলিজ, অ্যান্টিগুয়া ও বার্বুডা এবং সেন্ট কিট্রস ও নেভিস। কমনওয়েলথ প্রধান ছাড়াও তিনি ৫৪ সদস্যবিশিষ্ট কমনওয়েলথ অব নেশনসেরও প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। দ্বিতীয় এলিজাবেথ যুক্তরাজ্যের শাসনকর্তা এবং চার্চ অব ইংল্যান্ডেরও প্রধান। বিশ্বজুড়ে তুমুল জনপ্রিয় রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ এরই মধ্যে ব্রিটিশ রাজসিংহাসনে আরোহণের ৭০ বছর পূর্ণ করেছেন। ব্রিটেনের হাজার বছরের ইতিহাসে তিনি হলেন দ্বিতীয় ব্যক্তি, যিনি সমর্থ হলেন এ বিরল দীর্ঘতম সময়কে ছুঁয়ে দিতে। এর আগে দীর্ঘ সময় সিংহাসনে থাকার রেকর্ড রয়েছে রানী ভিক্টোরিয়ার। ১৮৩৭ থেকে ১৯০১ সাল পর্যন্ত ৬৪ বছর রাজত্ব করেন ভিক্টোরিয়া। আর ১৯৫২ সালের ৬ ফেব্র“য়ারি থেকে আজ অবধি রানীর আসনে আসীন মহামান্য রানী এলিজাবেথ। রানীর সিংহাসনের হীরকজয়ন্তী পালনের অভিজাত এ বিশেষ স্মারক বইয়ে উঠে এসেছে তাঁর নিয়ন্ত্রণাধীন রাজ্যের নানা ছবি, অজানা কথামালা। প্রতি সপ্তাহে রানী এলিজাবেথের সঙ্গে এক ঘণ্টা বৈঠক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীদের নিয়মের মধ্যে পড়ে। আর এই বিশেষ সময়টুকু সম্পর্কে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন বলেন, ব্রিটিশ রাজনীতির বাইরে, হাঁফ ছেড়ে অনন্য দুর্লভ সময়টুকু তাঁর কাছ থেকে পাই। এমন কোনো বিষয় নেই তাঁর স্বচ্ছ আয়ত্তে নেই।

ব্রিটিশ রাজনীতি কোন পথে হাঁটছে, সবই তাঁর নখদর্পণে, চলমান বিশ্ব পরিস্থিতির খুঁটিনাটি বিষয় তাঁর নজরে আছে। আর সেটি আবছা নয়, বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে। সুদীর্ঘ ছয় দশক বিশ্ব অভূতপূর্ব পরিবর্তনের মুখোমুখি হয়েছে; প্রশ্নের ঊর্ধ্বে থেকে রানী এলিজাবেথ মানুষের কল্যাণে নিজেকে জড়িয়ে রেখেছেন। ব্রিটেনের রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের জন্ম ২১ এপ্রিল ১৯২৬। পিতা ষষ্ঠ জর্জ ও মাতা এলিজাবেথ বউয়েস। ১৯৩৭ সালে এলিজাবেথের বাবা ষষ্ঠ জর্জ ব্রিটেনের রাজার আসনে বসেন। আর সে সময় ব্রিটিশ রাজসিংহাসনের পরবর্তী উত্তরাধিকারী ছিলেন রাজকুমারী এলিজাবেথ। ১৯৫২ সালের ফেব্র“য়ারি মাসের অদ্ভুত একটি দিনে জীবনটা বদলে যায় সেই রাজকন্যার। সুদূর কেনিয়ায় বসে সেদিন শোনেন পিতা ব্রিটিশ রাজ ষষ্ঠ জর্জের মৃত্যু সংবাদ। সেই দুঃখ-ভারাক্রান্ত হƒদয়ে সেদিনই তিনি জেনে গিয়েছিলেন রানী হওয়ার সংবাদ। মাত্র ২৫ বছর বয়সে তাঁর মাথায় উঠে রাজমুকুট। রানী হলেন এলিজাবেথ, সে থেকেই ব্রিটেনের জনগণের হƒদয়ে ভালোবাসা, শ্রদ্ধায় রানী হয়েই কাটিয়ে দেন এতগুলো বছর। ব্রিটেনের হাজার বছরের ইতিহাসে তিনি হলেন দ্বিতীয় ব্যক্তি যিনি এ বিরল দীর্ঘতম সিংহাসনে আসীন। ১৯৫২ সালের ৬ ফেব্র“য়ারি থেকে অদ্যাবধি রাজসিংহাসনে আসীন মহামান্য রানী এলিজাবেথ। তাঁর আমলে ব্রিটেনে ১২ জন প্রধানমন্ত্রী, যুক্তরাষ্ট্রে ১৩ জন প্রেসিডেন্ট ও ছয়জন পোপ নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি সফর করেছেন পৃথিবীর ১১৬টি দেশ। এলিজাবেথের দাম্পত্যসঙ্গী হলেন প্রিন্স ফিলিপ, ডিউক অব এডিনবরা। তাদের চার সন্তান রয়েছে- চার্লস, অ্যানি, অ্যান্ড্রু এবং অ্যাডওয়ার্ড। ১৯৪০ সালে এলিজাবেথ প্রথম রেডিও বিবিসিতে শিশুদের উদ্দেশে ভাষণ দেন। ১৯৪৩ সালে ১৬ বছর বয়সে এলিজাবেথ প্রথম জনসম্মুখে আসেন। ১৯৪৫ সালে তিনি সামরিক বাহিনীতে প্রশিক্ষণের জন্য যোগদান করেন। দীর্ঘ ছয় দশকের পথচলা তাঁর জন্য খুব মসৃণ ছিল না। টেমসের জলধারার সঙ্গে সঙ্গে অনেক চড়াই-উতরাই ছিল। সব কিছুর পরও রানী হচ্ছেন ব্রিটিশ জাতির ঐক্য আর ঐতিহ্যের প্রতীক।

রানীর জন্মদিন দুটি

বরাবরের মতোই রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ দুটি জন্মদিন উদযাপন করেন। তাঁর প্রকৃত জন্মদিন হলো ২১ এপ্রিল এবং অফিসিয়াল জন্মদিন জুন মাসের দ্বিতীয় শনিবার। জন্মদিন উপলক্ষে রাজকীয় পার্টির আয়োজন করা হয়। সেখানে রাজকীয় ভোজের পাশাপাশি নানা রকম পানীয়র ব্যবস্থা থাকে। অ্যালকোহলের মধ্যে ‘জিন’ রানীর পছন্দের শীর্ষে। জন্মদিন উপলক্ষে প্রতি বছর ২১ এপ্রিল বাকিংহাম প্যালেসের বাইরে রানীকে একনজর দেখার অপেক্ষায় আমজনতা হুমড়ি খেয়ে পড়েন। কেউ দেখা পান, কেউ ব্যর্থ মনোরথেই বাড়ি ফেরেন। তবে দুনিয়াজুড়ে গণতন্ত্রের পালে হাওয়া লাগলেও এখনো তিনি রাজতন্ত্রের পতাকা উড়িয়ে ঠাঁই বসে আছেন। বিশ্ব ইতিহাসে রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের শাসনকালই দীর্ঘতম। ২০১৫ সালের অক্টোবর মাসে ৮৮ বছর বয়সী থাইল্যান্ডের রাজা ভুমিবল আদুল্যদুর মৃত্যুর পর বর্তমানে তিনি বিশ্বের প্রবীণতম শাসকও বটে। উইনস্টন চার্চিল থেকে শুরু করে তেরেসা মে রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের রাজত্বকালে ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিটে পা রেখেছেন মোট ১৫ জন প্রধানমন্ত্রী।

রানীর গোপন ইশারা

বিরক্তিকর বা দীর্ঘ আলাপচারিতা থেকে মুক্তি পেতে সবাই চান। হয়তো সবারই আলাদা আলাদা উপায় রয়েছে এ রকম পরিস্থিতিতে। প্রতিনিয়ত মানুষের সঙ্গে মেশা, বিশেষ করে গণ্যমান্য লোকজনের সঙ্গে চলাফেরা করা রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের অবস্থা তাহলে কী! ছয় দশক ধরে রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালনকারী ব্রিটিশ নারী দ্বিতীয় এলিজাবেথেরও এমন বিশেষ কতগুলো ইঙ্গিত আছে তাঁর কর্মচারীদের প্রতি বিরক্তিকর পরিস্থিতি থেকে উদ্ধার পাওয়ার জন্য। এক হাত থেকে আরেক হাতে ব্যাগ নিয়ে, হাতের আংটি ঘুরিয়ে বা হাত বিশেষ কায়দায় নাড়িয়ে নিজের কর্মচারীদের প্রতি বিশেষ এ রকম ইশারা করেন তিনি। ব্রিটিশ রাজপরিবারের ইতিহাস রচয়িতা হুগো ভিকারস জানান, রানীর এক হাত থেকে আরেক হাতে ব্যাগ নিয়ে নেওয়ার মানে তিনি কোনো আলোচনা শেষ করতে চান। কোনো অনুষ্ঠানে টেবিলের ওপর রানীর হাতব্যাগ রাখার মানে শিগগিরই তিনি অনুষ্ঠানস্থল ত্যাগ করবেন। ৫ মিনিট দেওয়া হলো বিদায়ী আনুষ্ঠানিকতার জন্য। বাম হাতের আংটি যদি রানী কখনো আরেক হাতের আঙ্গুল দিয়ে ঘোরাতে থাকেন তার মানে দ্রুত বিরক্তিকর কোনো কথোপকথন থেকে মুক্তি পেতে চান।

বিশ্ব ভ্রমণে লাগে না কোনো পাসপোর্ট

বিশ্ব ভ্রমণে লাগে না কোনো পাসপোর্ট। প্রায় ১৬ লাখ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ সফর করেছেন পৃথিবীর ১১৬টি দেশ। কিন্তু এতগুলো দেশ ভ্রমণ করলেও রানী এলিজাবেথের কোনো পাসপোর্ট লাগেনি। আসলে তাঁর নামে কখনো সরকারিভাবে কোনো পাসপোর্টই ইস্যু করা হয়নি। কারণ দেশের নাগরিকদের পাসপোর্ট দেওয়াই হয় রানী এলিজাবেথের নামে। সুতরাং আলাদা করে রানীর নিজের আর পাসপোর্ট করার কোনো প্রয়োজন হয়নি। রানী সিংহাসনে আসীনের ২৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে একবার বিশ্বভ্রমণে বের হয়েছিলেন। ১৯৭৪ সালের ১৭ মে ব্রিটেনের গ্লাসগো থেকে তিনি যাত্রা শুরু করেন। সে যাত্রায় রানী ৩৬টি দেশ ভ্রমণ করেন। আবার রানী এলিজাবেথ সাধারণ মানুষের সঙ্গে মিশতে খুব পছন্দ করেন। রানী এবং ডিউক এডিনবরা সর্বপ্রথম ১৯৭০ সালে প্রত্যন্ত অঞ্চলে ঘুরে বেড়ান। সে সময় তারা যতটা সম্ভব সাধারণ মানুষের সঙ্গে মেশেন, ছবি তোলেন। রানীর ১২৯টি প্রতিকৃতি বিভিন্ন স্থানে স্থাপন করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত রানী ৩৫টি রাজকীয় কর্মকান্ডে অংশ নিয়েছেন। এদিকে ব্যক্তিগত শখ হিসেবে রানী কুকুর পুষতে পছন্দ করেন। এখন পর্যন্ত তিনি জীবনে পর্যন্ত ৩০টি কুকুর পুষেছেন। তাঁর আদরের প্রথম পোষা কুকুরের নাম সুসান।

রানীর মৃত্যুর পর যা ঘটবে

সাধারণ মানুষের মনে প্রশ্ন উঠতেই পারে রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ মারা গেলে কী ঘটতে পারে অথবা কীভাবেই বা সারা হবে আনুষ্ঠানিকতাগুলো? রানীর মৃত্যুর খবরটা প্রথমে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রীকে জানানো হবে। আর তা করা হবে বিশেষ কোড ওয়ার্ড অর্থাৎ সংকেতের মাধ্যমে। রানীর কোড ‘লন্ডন ব্রিজ’। সাধারণত রানী অসুস্থ হলে তাঁর জ্যেষ্ঠ চিকিৎসক অধ্যাপক হিউ টমাস পাশে থাকেন। রানীর মৃত্যু হলে লন্ডনে পররাষ্ট্র দফতরের গ্লোবাল রেসপন্স সেন্টার থেকে এ খবর যুক্তরাজ্যের বাইরে ১৫টি দেশের সরকারের কাছে পাঠানো হবে। যুক্তরাজ্যের রানীই এসব দেশের রাষ্ট্রপ্রধান। এ ছাড়া রানীর প্রভাব রয়েছে কমনওয়েলথভুক্ত এমন ৩৬টি দেশেও খবরটি পাঠানো হবে। এসব দেশের প্রধানমন্ত্রী, গভর্নর জেনারেল ও রাষ্ট্রদূতরা শোক প্রকাশ করতে হাতের বাহুতে কালো ব্যাজ পরবেন। বাকিংহাম প্যালেসের ফটকে কালো নোটিস টাঙানো হবে। আর গণমাধ্যমের মধ্যে সর্বপ্রথম রানীর মৃত্যু সংবাদ জানতে পারবে বিবিসি। পরবর্তীতে অন্যান্য মাধ্যম। পার্লামেন্টের উভয় কক্ষের অধিবেশন ডাকা হবে, সাধারণ মানুষকে কাজ থেকে দ্রুত ছুটি দিয়ে বাড়ি পাঠানো হবে। আকাশপথে উড়োজাহাজের পাইলটরা যাত্রীদের সংবাদটি জানাবেন।

বৈবাহিক জীবনে কখনো শ্বশুরবাড়ি যাননি

ব্রিটেনের রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ ও সদ্য প্রয়াত প্রিন্স ফিলিপের বিবাহবার্ষিকী ২০ নভেম্বর। বিয়ের সময় রানীকে দেওয়া প্রিন্স ফিলিপের আংটিটি ছিল ‘ওয়েলস সোনা’ দিয়ে তৈরি। এ সোনা ইংল্যান্ডের উত্তর-পশ্চিম ওয়েলসের একটি সোনার খনি থেকে সংগ্রহ করা হয়। সোনার দলাটি খাঁটি ও দুষ্প্রাপ্য হওয়ার কারণে মহামূল্যবান। চার সন্তানের মধ্যে তিনজনেরই (চার্লস, অ্যানি ও অ্যান্ড্র–) বিবাহ বিচ্ছেদ হলেও এ রাজ দম্পতি কয়েক দশক ধরে একই সঙ্গে বসবাস করে আসছেন। তাদের দাম্পত্য জীবনে কোনো ধরনের কলহের কথা কখনো জানা যায়নি। কিন্তু অদ্ভুত হলেও এ কথা সত্যি যে, প্রিন্স ফিলিপের মৃত্যুর আগ পর্যন্ত এত বছরে রানী কখনো তাঁর শ্বশুরবাড়ি গ্রিসে যাননি। অবশ্য বিয়ের আগে গিয়েছিলেন। এখন তারা সাত দশক পূর্ণ করা দম্পতিদের কাতারে। গত বছর বিয়ের ৭০ বছর পূর্তি উপলক্ষে গ্রিনিচ মান সময় ১৩০০টায় ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবের ঘণ্টা বাজানো হয়। এ রাজ দম্পতির চার সন্তান, আট নাতি-নাতনি রয়েছেন।

হাতব্যাগে কত টাকা রাখেন?

রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের সঙ্গে সব সময়েই একটি হাতব্যাগ থাকে। হাতব্যাগের ক্ষেত্রেও রানী কিন্তু খুবই ফ্যাশনসচেতন। পোশাকের সঙ্গে মানানসই হাতব্যাগ ছাড়া রানীকে দেখা যায় না বললেই হয়। কিন্তু রানী তাঁর হাতব্যাগে টাকা রাখেন কি না এ জল্পনা অনেক দিন ধরেই। সাধারণ মানুষের ব্যাগে সবসময়ই টাকা থাকে এটাই স্বাভাবিক। চলতে-ফিরতে নানা প্রয়োজন হয়। সাধারণ অন্য নারীরা যেমন তার ব্যাগে এটা-সেটার সঙ্গে টাকা-পয়সাও রাখেন, রানীও কি তেমনই? কিন্তু সারাক্ষণ প্রটোকলের ঘেরাটোপে থাকা রানী খরচ করবেন কোথায়, তা ছাড়া একা একা নিশ্চয়ই তিনি কখনো কোথাও বের হতে পারেন না। জানা গেছে, হাতব্যাগে তাঁর প্রিয় ক্ল্যারিনস লিপস্টিকের কোনো একটা শেড, একটি মোবাইল ফোন, রিডিং গ্লাস, মিন্ট লজেন্স এবং একটি ফাউন্টেন পেন থাকে। তবে হাতব্যাগে কোনো নগদ টাকা থাকে না। কিন্তু প্রতি সপ্তাহে একটি দিন তিনি তাঁর হাতব্যাগে টাকা রাখেন। সেই দিনটি রবিবার। তবে তারও একটি বিশেষ কারণ রয়েছে। ইংল্যান্ডের রানী তাঁর পদাধিকার বলেই ইংল্যান্ডের চার্চেরও প্রধান। এ বিশেষ দিনটিতেই তিনি তাঁর বিখ্যাত হাতব্যাগে টাকা রাখেন। সেই টাকা থেকেই তিনি চার্চের কালেকশন প্লেটে দান করেন।

জলপাইয়ের তেল খেয়ে গর্ভবতী হন!

রানীকে ঘিরে যেহেতু জনসাধারণের ব্যাপক উৎসাহ। তা ছাড়া গোটা বিশ্বেই রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ সমাদৃত ব্যক্তি। তবে সত্যিকারভাবে রাজপরিবারের কোনো গোপন নেতিবাচক তথ্য প্রকাশিত হতে দেয় না ইংল্যান্ডের নিরাপত্তাবিষয়ক সংস্থাগুলো। প্রয়োজনে তারা সর্বোচ্চ কঠোর হতেও দ্বিধাবোধ করেনি কখনো। কিন্তু রানীকে নিয়ে অনেকেই ভ্রান্ত ধারণা ছড়ান। এমনই একটি ঘটনা হলো জলপাইয়ের তেল বিষয়ক। গিলবার্ট ডিয়া নামে এক ধর্মপ্রচারক দাবি করেন রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ ছিলেন বন্ধ্যা। অনেক চিকিৎসা নিয়েও তিনি মা হতে পারছিলেন না। অবশেষে জলপাই তেল খেয়ে তিনি গর্ভবতী হন। গিলবার্টের এ দাবি ব্রিটেনজুড়ে তোলপাড় তোলে। গিলবার্ট নিজেকে পেকহামের প্রধান ধর্মযাজক দাবি করেন। অথচ তিনি কেনিয়ায় এক তালিকাভুক্ত চুরির আসামি। গিলবার্ট ডিয়া এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল বিক্রির সময় দাবি করেছেন এ তেল ক্যান্সার ও এইডস রোগ সারিয়ে তুলতে পারে। সংবাদমাধ্যমেও তার তেলের ব্যাপক প্রচার করা হয়।

কত সম্পদের মালিক?

রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ কত ধন-সম্পদের মালিক তা নিয়ে অনেকেরই আগ্রহ। এক সময় রাজা-রানী মানে তো তারা পুরো রাজ্যেরই মালিক। এখন আর তেমন নয়। এখন রাজা-রানীকেও রাষ্ট্রের কোষাগারে কর দিতে হয়। রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ ২০১৫ সালে ক্রাউন এস্টেট থেকে ২৮ কোটি ৫০ লাখ পাউন্ড পেয়েছিলেন। সরকারি কোষাগার থেকে পাচ্ছেন ২০ লাখ পাউন্ড। কিন্তু কথা হলো রানী ঠিক কত ধন-সম্পদের মালিক। আসলে তাঁর ধনসম্পদের পরিমাণ কখনো স্পষ্ট হয়ে ওঠেনি। এর কারণ হলো, রানীকে তাঁর ব্যক্তিগত সম্পদের পরিমাণ কত, তা ঘোষণা করতে হয় না। রানীর দুই ধরনের আয় রয়েছে। একটা হলো রানী হিসেবে, অন্যটা একজন নাগরিক হিসেবে। আগে ইংল্যান্ডে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ করার ক্ষেত্রে অনেক নিয়মকানুনের ভিতর দিয়ে যেতে হতো। কিন্তু রানী দ্বিতীয় এরিজাবেথ ক্ষমতায় বসার পর বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বজায় থাকা সাবেক অনেক আইন রহিত করেন। প্রতিবছর বিশ্বের বিভিন্ন স্থান থেকে বিপুল পরিমাণ পর্যটক ইংল্যান্ডের বাকিংহ্যাম প্যালেস দেখতেই আসেন। রাজপ্রাসাদের পাশাপাশি যত ব্রিটিশ জাদুঘর রয়েছে তার সবগুলো থেকে বছরে যা আয় হয় তা সম্পূর্ণ আয়করের আওতামুক্ত এবং সরাসরি রানীর কোষাগারে জমা হয়।

হীরকজয়ন্তীতে আয় ১৫৮০ কোটি পাউন্ড

রানীর সিংহাসনে আরোহণের ৬০ বছর পূর্তির আনন্দের ছোঁয়া ব্রিটেনজুড়েই ছিল। এ হীরকজয়ন্তী উদযাপনকে কেন্দ্র করে পর্যটক আকর্ষণের জন্য মনোরম সাজে সাজানো হয়েছিল ব্রিটেনের পর্যটন এলাকাগুলো। রানীর হীরকজয়ন্তী উৎসব পালনে ঐতিহ্যবাহী ব্রিটিশ রাজপরিবারের এসব অনুষ্ঠান যেমন ব্যয়বহুল তেমনি লাভজনকও। হীরকজয়ন্তীর কল্যাণে এবার ব্রিটেন পর্যটন খাত থেকে ১ হাজার ৫৮০ কোটি পাউন্ড আয় করে। ব্রিটেনের অর্থনীতিতে এটি বড় ধরনের অর্থযোগ। আর সেবার অলিম্পিক গেমসের আয়োজন করাসহ রাজধানী লন্ডনে চলতি শতকে সবচেয়ে বেশি পর্যটক এসেছে বলে জানা গেছে। রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের রাজত্বকালে মাত্র তিনজন রাজার হীরকজয়ন্তী পালন হয়েছে। ২০০৬ সালে থাইল্যান্ডের রাজা ভুমিবল, ১৯৫৫ সালে সাবেক সুলতান জহর (বর্তমানে মালয়েশিয়ার একটি অংশ) এবং ১৯৮৬ সালে জাপানের সম্রাট আকিহিতো তাদের রাজত্বের হীরকজয়ন্তী পালন করেন।