Main Menu

বিশ্বনাথে স্কুলছাত্রের লাশ নিয়ে মিছিল

সিলেটের বিশ্বনাথের চৈতননগরে যুক্তরাজ্য প্রবাসী সাইফুল আলমের গুলিতে নিহত হওয়া স্কুলছাত্র সুমেল মিয়ার (১৮) লাশ বিক্ষোভ করেছেন এলাকাবাসী।

রোববার বিকেল সাড়ে ৩টার দিক বিশ্বনাথ থানা গেটের সামনে বিক্ষোভ শেষে অবস্থান কর্মসূচী পালন করেন ‘চাউলধনী হাওর ও কৃষক বাঁচাও আন্দোলন কমিটি’র নেতারা।

অবস্থান কর্মসূচীতে এলাকাবাসী চাউলধনী হাওরের ইজারাদার দশঘর মৎস্যজীবী সমিতির ফাউন্ডার প্রবাসী সাইফুল আলমকে গ্রেপ্তার ও ফাসির দাবি জানান তারা। এসময় বক্তব্য রাখেন দৌলতপুর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সম্পাদক আমির আলী, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ‘চাউলধনী হাওর ও কৃষক বাঁচাও আন্দোলন কমিটি’র যুগ্ম- আহবায়ক হাজী আরিফ উল্লাহ সিতাব এবং কমিটির সদস্য আহমদ আলী। পরে বাদ আছর জানাজার নামাজ শেষে সুমেলের দাফন সম্পন্ন করা হয়েছে। জানাজার নামাজে স্থানীয় এমপি মোকাব্বির খান ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ চাউলধনী হাওর পাড়ের বাসিন্দা এবং এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গরা উপস্থিত ছিলেন।

নিহত সুমেদ চৈতননগর গ্রামের আব্দুল মানিকের ছেলে ও শাহজালাল ঘাগুটিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্র। আর প্রতিপক্ষ প্রবাসী সাইফুল আলম চৈতননগরের পাশের ইসলামপুর গ্রামের বাসিন্দা ও চাউলধনী হাওরের ইজারাদার দশঘর মৎস্যজীবী সমিতির ফাউন্ডার।

এর আগে শনিবার (১মে) বিকেলে চৈতননগরে জমি থেকে মাটি তুলতে বাধা দেওয়ায় প্রতিপক্ষ যুক্তরাজ্য প্রবাসী সাইফুল আলমের গুলিতে সুমেল মিয়া (১৮) নিহত হন। গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হন সুমেলের বাবা আব্দুল মানিক (৫০), চাচা যুক্তরাজ্য প্রবাসী মনির মিায়া (৪৫) ও চাচাতোভাই সালেহ আহমদ (৩০)। তারা সকলেই সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৩য় তলার ১১ নং ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

এঘটনায় আটক ৪জনকে ৫৪ধারায় রোববার (২মে) দুপুরে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। এরা হলো আলাউদ্দিন (৫৫), ইলিয়াস আলী (৬০), জয়নাল আবেদীন (৪৫) ও আব্দুন নুর (৪৮)।

এদিকে প্রবাসী সাইফুল আলমকে ধরিয়ে দিলে ৫লাখ টাকা পুরস্কার ঘেষাণা করে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন বিশ্বনাথের কবির আহমদ নামের আরও এক যুক্তরাজ্য প্রবাসী। বর্তমানে তার এ ঘোষণার বিষয়টি ভাইরাল হয়েগেছে। স্ট্যাটাসে মোহাম্মদ কবির মিয়া লিখেছেন ‘৭২ ঘন্টার ভিতরে এই খুনিরে ধরিয়ে দিলে আমার পক্ষ থেকে ৫লক্ষ টাকা পুরস্কার দেওয়া হবে।

অন্যদিকে কবির মিয়ার দেওয়া এ ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়ে মিজানুর রহমান মুজাহিদ নামের এক প্রবাসী তার ফেসবুকে লিখেছেন ‘বিশ^নাথ উপজেলার চাউলধনী হাওরের কুখ্যাত সন্ত্রাসী কৃষক হত্যাকারী ডবল মার্ডারের আসামি জুলুমবাজ সাইফুলকে ধরিয়ে দিলে কৃষক বন্ধু মোহাম্মদ কবির মিয়া ৫লাখ টাকা ঘোষণা করেছেন।

প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ জানায়, চাউলধনী হাওরের পাড় দিয়ে চৈতননগর ও ইসলামপুরের পাশ দিয়ে ছাতকের লামা টুকেরবাজার পর্যন্ত সরু একটি কাঁচা সড়ক রয়েছে। চৈতননগর থেকে নিজবাড়ি পর্যন্ত যাতায়াতের জন্য ওই সড়কটি মাটি দিয়ে নিজ উদ্যোগে বড় করছেন সাইফুল আলম। গত শনিবার চৈতননগরের নজির আহমদের কৃষি জমি থেকে জোরপূর্বক মাটি তুলে সড়কে দিতে চাইলে বাঁধা দেন নজির আহমদ পক্ষ। এ নিয়ে হাতাহাতির একপর্যায়ে বন্ধুক দিয়ে গুলি করেন সাইফুল। এসময় নজিরের ভাতিজা সুমেল, তার দুই ভাই ও এক ভাতিজা গুলিবিদ্ধ হন।

নজির আহমদ, আব্দুল মালিক, মনির মিয়াসহ চৈতননগর গ্রামের বাসিন্দাদের অভিযোগ, জোরপূর্বক মাটি কাটায় বাধা দেওয়ায় সাইফুল তার ভাই নজরুল আলম নজ্জু, লুৎফুর রহমান, ময়ূর মিয়াসহ ১০/১২ জনকে নিয়ে হামলা চালান নিজের হাতে থাকা বন্ধুক ও পিস্তল দিয়ে এলোপাতারী গুলি করেন সাইফুল। এতে স্কুলছাত্র সুমেল নিহত ও একই পরিবারের ৪ জন গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হন।

স্থানীয় ইউপি সদস্য আনোয়ার হোসেন ধন মিয়া এ প্রতিবেদককে বলেন, সাইফুল তার নিজের বন্ধুক দিয়ে প্রকাশ্যে গুলি করে সুমেলকে হত্যা করেছে। কৃষক দয়াল হত্যা মামলার প্রধান আসামি থাকার পরও সাইফুল প্রতিনিয়ত থানায় যাওয়া আসা করতেন এবং ওসিসহ সকল কর্মকর্তাদের সঙ্গে সখ্যতাও ছিলো বলে অভিযোগ করেন তিনি। এছাড়াও ফেসবুক লাইভে তিনি বারবারই সাইফুলের এ কর্মকান্ডের জন্যে পুলিমকেই দায়ী করেছেন।

তবে, চিকিৎসাধীন অবস্থায় তারা শঙ্কামুক্ত রয়েছেন বলে জানিয়েছেন সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. হিমাংশু লাল রায়। তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, বন্ধুকের ছিটা-গুলিতে তারা তিনজনই আহত হয়েছেন।

সাইফুল আলম গুলি করেননি জানিয়ে তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, ঘটনাস্থল থেকে তার বাড়িও অনেক দূরে। নজির আহমদের লোকজন তাদের উপর হামলা করায় মারামরি হয়েছে।

বিশ্বনাথ থানার ওসি শামীম মুসা বলেন, এ ঘটনায় এখনও মামলা হয়নি। তাই ঘটনাস্থল থেকে আটক করা চারজনকে ৫৪ধারায় জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।