Main Menu

বাবারা এমনই হন, সকল প্রতিকূলতায় এভাবেই বুক পেতে আগলে রাখেন

মৃত স্বজনের জানাজায় অংশ নিতে পরিবারের সবাই মিলে যাচ্ছিলেন শেরপুরে। কিন্তু মরণদূত ছোট্ট বুলবুলিদের যেতে দেয়নি নালিতাবাড়িতে। ময়মনসিংহের ফুলপুরে খাদে পড়ে যায় তাদের বহনকারী মাইক্রোবাস। এক পরিবারের তিনজনসহ ‍দুর্ঘটনায় মারা যায় আটজন। জীবিত উদ্ধার করা হয় ছয়জনকে।

মঙ্গলবার সকালের দিকের এই ট্রাজেডির খবর বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মানুষের কাছে পৌঁছায়। শোকের খবরের মধ্যে এমন ভয়াবহ দুর্ঘটনায় সবাইকে স্তব্ধ করে দিয়েছে। তবে এরমধ্যেও ছোট্ট মেয়েকে আঁকড়ে থাকা একজন বাবার একটি ছবি সবার মনকে নাড়া দিয়েছে। সাত বছরের এই মেয়েটির নাম বুলবুলি আক্তার। তাকে পরম মমতায় জড়িয়ে ধরেছিলেন তার বাবা মো. শাহজাহান।

ছবি বলছে, দুর্ঘটনায় পড়া গাড়ি থেকে যখন নিহত আহতদের বের করা হচ্ছিল তখন বুলবুলিকে বাঁচাতে শেষ চেষ্টা চালান তার বাবা। কিন্তু আদরের ধন ততক্ষণে পরপারে পাড়ি জমিয়েছে। তাই মেয়েকে বাঁচাতে না পেরে বুকে জড়িয়ে ধরে বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন শাহজাহান। মেয়েটির মাও দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ভাইরাল হওয়া ছবিতে দেখা গেছে, মানুষের ভিড়ের মধ্যে ফাঁকা জায়গায় ছোট্ট মেয়েটির নিথর দেহ জড়িয়ে ধরে শুয়ে আছেন একজন মানুষ। পরে জানা যায়, তিনি মেয়েটির বাবা।

তবে মর্মস্পর্শী ছবিটি দেখে অনেকে মনে করেছেন, বাবা-মেয়ে দুজনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে অনেককেই ফেসবুকে আবেগঘন স্ট্যাটাস দিতে দেখা যায়। তবে জানা গেছে, দুর্ঘটনায় মেয়ে বুলবুলি আক্তার মারা গেলেও বেঁচে আছেন বাবা শাহজাহান।

অন্যদিকে কেউ বলছেন, মারা যাওয়া শিশুটিকে জড়িয়ে ধরে আর্তনাদ করা মানুষটি তার চাচা। তবে ফুলপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইমারত হোসেন ঢাকা টাইমসকে বলেছেন, ‘কান্না করতে করতে এক পর্যায়ে মেয়েটির বাবা বলতে থাকেন আমার মেয়ে কারো কোলে ঘুমাবে না, আমার কোলেই ঘুমাবে।’ এই বলে মেয়েকে বুকে নিয়ে তিনি শুয়ে পড়েন শাহজাহান।

ফেসবুকে দেয়া বেশিরভাগেরই স্ট্যাটাসে হৃদয়বিদারক এই ছবিতে সন্তানের প্রতি বাবাদের স্নেহ-মমতার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে।

ছবিটি পোস্ট করে গণমাধ্যমকর্মী সাজেদা সুইটি লিখেছেন, ‘বাবারা এমনই হন, সারা পৃথিবীর সকল প্রতিকূলতায় এভাবেই বুক পেতে আগলে রাখেন।’

তানভীর আহমেদ সিদ্দিকী লিখেছেন, ছবিটির দিকে তাকান। ছোট্ট মেয়েটি মৃত, তাকে শক্ত করে বুকে জড়িয়ে রেখেছে তার প্রিয় পিতা। মৃত্যুর যন্ত্রণা বাবা-মেয়েকে আলাদা করতে পারেনি।

ফুলবাড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইমারত হোসেন জানিয়েছেন, আত্মীয়ের জানাজায় অংশ নেয়ার জন্য ময়মনসিংহের ভালুকা থেকে শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলায় যাচ্ছিলেন এরা। পথে ফুলপুর ছনধরা ইউনিয়নের বাঁশাটি গ্রামে একটি গাছের সঙ্গে ধাক্কা লেগে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পাশের একটি পুকুরে পড়ে যায় তাদের বহনকারী মাইক্রোবাসটি। এ সময় শিশুসহ আটজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। দুর্ঘটনায় জীবিত উদ্ধার করা হয় ছয়জনকে। নিহতদের বাড়ি ময়মনসিংহের ভালুকা ও গফরগাঁও উপজেলায়। তারা সবাই আত্মীয়-স্বজন বলে জানা গেছে।