Main Menu

বাজেয়াপ্ত হচ্ছে শাহজালালে পড়ে থাকা ২১ উড়োজাহাজ

শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পড়ে থাকা ২১টি উড়োজাহাজ নিয়ে বেকায়দায় কর্তৃপক্ষ। বিভিন্ন এয়ারলাইন্সের এসব বিমানে জং ধরেছে। একাধিকবার বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ এগুলো সরিয়ে নিতে চিঠি দিয়েছে। সর্বশেষ দ্রুত সময়ে এসব উড়োজাহাজ সরিয়ে না নিলে বাজেয়াপ্ত করার ঘোষণা দিয়েছে।

এ বিষয়ে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পরিচালক এএইচএম তৌহিদুল আহসান জানান, পুরনো উড়োজাহাজগুলো বিমানবন্দর থেকে সরাতে এয়ারলাইন্স প্রতিষ্ঠানগুলোকে বারবার  তাগাদা দেয়া হয়। কিন্তু তারা বলে যে, সেগুলো দ্রুত মেরামত করে আবার সার্ভিস দেয়া শুরু করবে। কিন্তু তারা এখনো সার্ভিসে যেতে পারেনি। বিমানবন্দর থেকে দ্রুত না সরালে কর্তৃপক্ষ পুরনো বিমানগুলো বাজেয়াপ্ত করে সরকারি কোষাগারে রাখবে।

শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সূত্রে জানা গেছে, বিমানবন্দরে পুরনো উড়োজাহাজগুলো ডাম্পিং করে রাখার কারণে বিমানবন্দরের গুরুত্বপূর্ণস্থান কার্গো ভিলেজের অ্যাপ্রোণের বিশাল অংশ দখল হয়ে আছে। এতে সেখানকার স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। এর চাপ পড়ছে যাত্রীবাহী টার্মিনালে।

সূত্র জানায়, বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজ অ্যাপ্রোণে ২০১২ সালের মার্চে পরিত্যক্ত দু’টি এমডি-৮২, দু’টি ড্যাশ-৮ উড়োজাহাজ ফেলে রাখা হয়। পরে ড্যাশ-৮ উড়োজাহাজ ২টি বিক্রি করে দিলেও এখনো সরিয়ে নেয়া হয়নি। ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে স্কাই ক্যাপিটাল এয়ারলাইন্সের একটি ট্রাই স্টার উড়োজাহাজ পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে। এছাড়াও অ্যাভিয়েনা এয়ারলাইন্সের একটি ড্যাশ-৮ ও বিসমিল্লাহ এয়ারলাইন্সের একটি ড্যাশ-৮ পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে সেখানে। আরো রয়েছে ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের ১০টি এবং রিজেন্ট এয়ারওয়েজের ২টি ড্যাশ উড়োজাহাজ।

সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরে এসব উড়োজাহাজ বিমানবন্দরে পরিত্যক্ত অবস্থায় থাকায় স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। এগুলো সরিয়ে নিতে এয়ারলাইনসগুলোকে একাধিকবার চিঠি এবং মৌখিকভাবে যোগাযোগ করেছে কর্তৃপক্ষ। কিন্তু বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠান উড়োজাহাজগুলো সরিয়ে নিতে সময় চেয়ে আবেদন করেছে। কিন্তু তাদের অনেকেরই আবেদনের সময় শেষ হয়ে গেছে। এয়ারলাইন্সগুলো যদি সেখান থেকে সব উড়োজাহাজ না সরায় তাহলে উড়োজাহাজগুলো স্ক্র্যাপ হিসেবে বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নিবে বেসরকারি বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ।

সূত্র জানায়, ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের ১০টি উড়োজাহাজ শাহজালাল বিমানবন্দরে পড়ে আছে। প্রতিষ্ঠানটি অর্থ সংকটে সেগুলো সার্ভিসে নিয়ে যেতে পারেনি। এছাড়াও রিজেন্ট এয়ারওয়েজের ১টি বোয়িং ও ২টি ড্যাশ নিয়ে মোট তিনটি উড়োজাহাজ ডাম্পিং স্টেশনে আছে। তারা অর্থ সংকটে সেখান থেকে পুরনো উড়োজাহাজগুলো সরাতে পারছেন না।

সূত্র জানায়, উড়োজাহাজগুলো সরিয়ে না নেয়ায় এয়ারলাইন্সগুলোর পার্কিং বাবদ চার্জ প্রতিনিয়ত বকেয়া হিসেবে বাড়ছে। কার্যক্রম গুটিয়ে নেয়া এয়ারলাইন্সগুলো  থেকে এ অর্থ আদায়ও করতে পারছে না বেবিচক। চালু থাকা এয়ারলাইন্সগুলোও বকেয়া পরিশোধ করছে না। গত জুন পর্যন্ত অ্যারোনটিক্যাল ও নন-অ্যারোনটিক্যাল চার্জ বাবদ বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের কাছে ১ হাজার ৪৪৭  কোটি এবং ইউনাইটেড এয়ারলাইন্সের কাছে সব মিলে প্রায় ২০০ কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে বেবিচকের।

সূত্র জানায়, যে পুরনো উড়োজাহাজগুলো ডাম্পিং করা আছে তার নির্দিষ্ট পরিমাণে একটি চার্জ দেয়ার কথা এয়ারলাইন্সের প্রতিষ্ঠানগুলোকে। কিন্তু অনেক প্রতিষ্ঠান মাসিক চার্জ দিচ্ছে না। এতে তাদের কাছে মোটা অঙ্কের টাকা পাওনা রয়েছে বেবিচকের। কোনো কোনো এয়ারলাইন্সের কাছে যে পাওনা টাকা পাওয়া যাবে তা ডাম্পিং স্টেশনে পড়ে থাকা বিমানের দ্বিগুণ। এজন্য বেসরকারি বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) টাকা আদায়ের কথা চিন্তা করে এয়ারলাইন্সগুলোর পুরনো বিমানগুলো সেখান থেকে সরাতে পারছেন না। কারণ  সেই পুরনো উড়োজাহাজগুলো বিক্রি করে তার অর্ধেকও পাওয়া যাবে না। উড়োজাহাজের যন্ত্রাংশ নষ্ট হওয়ার পথে।

সূত্র জানায়, একটি যৌক্তিক সময় দেয়া হয়েছে যদি এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষ সেখান থেকে না সরিয়ে নেয় তাহলে সেগুলো বেবিচক বাজেয়াপ্ত করবে। কারণ পরিত্যক্ত উড়োজাহাজগুলো সরিয়ে নিলে সেখানে কমপক্ষে সাতটি উড়োজাহাজ পার্কিং করা যাবে। পাশাপাশি কার্গোগুলোতে মালামাল ওঠানো ও নামানো সহজ হবে। এছাড়াও যাত্রীবাহী ট্রার্মিনালের একপাশের চাপ কমবে।