Main Menu

বসনিয়ার ক্যাম্পে নিপীড়ন ও বঞ্চনার শিকার বাংলাদেশি অভিবাসনপ্রত্যাশীরা

ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্যরাষ্ট্র ক্রোয়েশিয়ার সঙ্গে বসনিয়ার যে সীমান্ত রয়েছে সেখান থেকে বসনিয়ার প্রায় ১০ কিলোমিটার ভেতরে মিরাল ক্যাম্প৷ ইউরোপে অভিবাসী হতে আগ্রহী বাংলাদেশিরা আছেন সেখানে৷

জাতিসংঘের ‘আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা’ আইওএম মিরাল ক্যাম্পটি পরিচালনা করে৷ আইওএম বলছে, ক্যাম্পে মোট সাতশ জনের থাকার ব্যবস্থা আছে৷ ক্যাম্পের বাসিন্দাদের মধ্যে ৫০ শতাংশ পাকিস্তানি অভিবাসনপ্রত্যাশী৷ বাংলাদেশিদের হার ২৮ শতাংশ৷ এছাড়া মরক্কো, আফগানিস্তান, সিরিয়া, আলজেরিয়াসহ আরও কয়েকটি দেশের অভিবাসনপ্রত্যাশীরাও আছেন সেখানে৷

ক্যাম্পের ব্যবস্থাপক আইওএম কর্মকর্তা মিতে চিলকোভস্কি জানান, ক্যাম্পের বাসিন্দাদের দিনে তিন বেলা খাবার দেয়া হয়৷ এছাড়া দুটি রান্নাঘর আছে যেখানে অভিবাসনপ্রত্যাশীরা পছন্দমত খাবার রান্না করতে পারেন৷ তবে রান্নাঘর দুটি মূলত পাকিস্তানি অভিবাসনপ্রত্যাশীরা দখল করে রেখেছে বলে অভিযোগ করেন বাংলাদেশিরা৷ পাকিস্তানিরা সেখানে রুটির ব্যবসা শুরু করেছে বলে জানা গেছে। মাঝেমধ্যে রান্না করতে চাইলে পাকিস্তানিরা বাধা দেন বলেও অভিযোগ করেন কয়েকজন বাংলাদেশি৷

ক্যাম্পে বাস করা বাংলাদেশি অভিবাসনপ্রত্যাশীরা তাদের অভিজ্ঞতার কথা জানান৷ বসনিয়া সীমান্ত পাড়ি দিতে গিয়ে ক্রোয়েশিয়ার পুলিশের বাধা ও তাদের হাতে নির্যাতিত হওয়ার বর্ণনা দিয়েছেন তারা৷

Bosnien und Herzegowina Flüchtlingslager Miral

মিরাল ক্যাম্পের ভেতরের ছবি

যেমন সিলেট থেকে আসা শফিক মিয়া তার ডানহাতে থাকা কুকুরের কামড়ের ক্ষত দেখিয়েছেন৷ অভিবাসনপ্রত্যাশীদের নিয়ন্ত্রণ করতে পুলিশ কুকুর ছেড়ে দিয়েছিল বলে অভিযোগ করেন তিনি৷ এরপর অবশ্য পুলিশই তাকে হাসপাতালে ভর্তি করে৷ হাতে ১২টি সেলাই থাকা শফিক মিয়া এরপরও আবার ক্রোয়েশিয়া ঢোকার চেষ্টা করবেন বলে জানিয়েছেন৷ আবারও এমন হামলার সম্ভাবনা থাকা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘নসিবে থাকলে আবার এমন হবে৷’ এরপরও দেশে ফিরে যেতে চান না শফিক মিয়া৷ তাঁর মতে, ‘‘দেশের পরিস্থিতি খারাপ, দেশে গিয়ে কোনো লাভ নেই৷” তবে পরিচিত কেউ এভাবে ইউরোপে আসতে চাইলে তিনি না করবেন বলে জানিয়েছেন৷ তাঁর দাবি, ‘‘আমিতো বুঝি নাই এমন অবস্থা হবে তাইলেতো আসতাম না৷’’

শফিকের মতো আরও কয়েকজন অভিবাসনপ্রত্যাশী দাবি করেন, তারা ধারনা করতে পারেননি যে, পথে তাদের এমন পরিস্থিতির শিকার হতে হবে৷

Bosnien und Herzegowina Flüchtlingslager Miral

অবশ্য এই তথ্যের সঙ্গে একমত নন ক্যাম্পে ছয়মাস ধরে থাকা আরেক বাংলাদেশি অভিবাসনপ্রত্যাশী সোহেল৷ তার দাবি, তারা ভুল তথ্য দিচ্ছেন, মিথ্যা কথা বলছেন৷ নিজের কথা জানাতে গিয়ে সিলেট শাহপরানের সোহেল বলেন, ‘‘আমি দেশ থেকেই জেনে এসেছি যে আমার প্রথমে ইরান যেতে হবে, এরপর নানা পথ পেরিয়ে তুরস্ক হয়ে ইটালি পৌঁছতে হবে৷ আমার অন্ন থাকবে না, বস্ত্র থাকবে না, বাসস্থান থাকবে না, কোনো কিছু থাকবে না, এগুলো আমার সহ্য করে যেতে হবে৷ ১৮-২০ লাখ টাকা খরচ হবে৷ এগুলো আমি জেনেই আসছি৷’’

রুহুল আমিন নামের আরেক অভিবাসনপ্রত্যাশী তার ভেঙে যাওয়া বাম হাতটি দেখান৷ ক্রোয়েশিয়ার জাগরেবে পুলিশের হাত মার খেয়ে তার এই অবস্থা হয়েছে বলে জানান তিনি৷ জাগরেবে পুলিশ ধরার পর তাকেসহ আরও কয়েকজনকে ৩০ ঘণ্টা বন্দি রেখে পরে বসনিয়ায় পাঠিয়ে দেয়া হয়৷ একই ঘটনায় মাথায় আঘাত পেয়েছেন শামীম আহমেদ৷ এরপরও রুহুল আর শামীম দেশে ফিরতে চান না৷ আবারও তারা ইউরোপে প্রবেশের চেষ্টা করতে চান৷

মিরাল ক্যাম্পে সাতশ জনের থাকার ব্যবস্থা থাকলেও বাইরে থাকা অভিবাসনপ্রত্যাশীদের অনেকে দেয়াল টপকে ক্যাম্পে ঢুকে পড়েন এবং সেখানে থাকেন৷ একসময় নিরাপত্তা কর্মীরা বহিরাগতদের ক্যাম্প থেকে বের করে দিলেও এখন শীত আসায় সেই কাজে ঢিলে দেয়া হয়েছে বলে জানান অভিবাসনপ্রত্যাশীরা৷ ফলে অল্প জায়গায় গাদাগাদি করে থাকছেন তারা৷

মিরাল ক্যাম্প যে এলাকায় অবস্থিত তার নাম ভেলিকা ক্লাদুসা৷ সেখানকার স্থানীয়রা ক্যাম্পটি বন্ধ করে দেয়ার দাবি জানিয়েছেন৷ এজন্য তারা বিক্ষোভও করেছেন৷ তবে ক্যাম্পের ব্যবস্থাপক আইওএম কর্মকর্তা মিতে চিলকোভস্কি জানান, শিগগিরই ক্যাম্পটি বন্ধ হওয়ার কোনো কারণ নেই৷ বরং বাইরে থাকা অভিবাসনপ্রত্যাশীদের জন্য আরও একটি ক্যাম্প খোলা প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি৷

চিলকোভস্কি জানান, ক্যাম্পের বাসিন্দাদের তিনবেলা খাবার দেয়ার পাশাপাশি তাদের অন্য সামগ্রীও দেয়া হয়৷ এছাড়া স্থানীয় ডাক্তারদের দিয়ে ক্যাম্পের ভেতরে ও বাইরে থাকা আহত অভিবাসনপ্রত্যাশীদের চিকিৎসা দেয়া হয়৷

করোনার কারণ দেখিয়ে ক্যাম্পের ভেতরে থাকা অভিবাসনপ্রত্যাশীদের ক্যাম্পের বাইরে যেতে দেয়া হয় না বলে অভিযোগ করেছেন অনেকে৷ তবে চিলকোভস্কির দাবি, ঘণ্টায় দশজনকে বাইরে যেতে দেয়া হয়৷ কারণ সাতশজন একসঙ্গে বের হলে স্থানীয়রা সমস্যা পড়তে পারেন৷

চিলকোভস্কি জানান, প্রতি সপ্তাহের বুধবার ক্যাম্পে বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করে সমস্যার কথা শোনা হয় এবং সমাধান খোঁজার চেষ্টা করা হয়৷