Main Menu

পরিস্থিতি সামাল দিতেই দ্রুত চাল আমদানি

বাজারে মূল্য বেশি পেতে সরকারের ধান-চাল সংগ্রহ কর্মসূচিতে পুরোপুরি সাড়া দিচ্ছেন না কৃষক। এতে বোরো মৌসুমে সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হবে কি না, তা নিয়ে দেখা দিয়েছে শঙ্কা।

অপরদিকে কোভিড-১৯ সহায়তা হিসাবে ওএমএসসহ নানা কর্মসূচিতে চাল বিতরণ কার্যক্রম চলছে। আগামী দিনে এসব কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে। এমন পরিস্থিতিতে মজুত বাড়াতে দ্রুত বিদেশ থেকে চাল আমদানির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। সংশ্লিষ্ট সূত্রে পাওয়া গেছে এসব তথ্য।

এ প্রসঙ্গে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সংগ্রহ ও সরবরাহ অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব খাজা আব্দুল হান্নান বলেন, চালের মজুত পরিস্থিতি ভালো রাখার জন্য বিদেশ থেকে চাল আমদানি করা হচ্ছে।

সরকারের ওএমএস কার্যক্রম, বিভিন্ন বাহিনীর রেশনসহ নানা কর্মসূচি পরিচালনা করতে বছরে ১৫ থেকে ২০ লাখ টন চালের প্রয়োজন হয়। এখন কৃষক ধানের মূল্য বেশি পেয়ে সরকারি সংগ্রহ কর্মসূচিতে ধান দিতে আগ্রহী হচ্ছে না। অন্যদিকে মজুত কমপক্ষে ২০ লাখ টন ধরে রাখতে হয়। এসব পরিস্থিতি বিবেচনায় চাল আমদানি করা হচ্ছে। এতে কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হবে না।

জানা গেছে, চলতি বোরো মৌসুমে (২০২১) কৃষকের কাছ থেকে ১৬ লাখ ৫০ হাজার টন ধান ও চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। এপ্রিলে সংগ্রহ কর্মসূচি শুরু করা হয়। এর মধ্যে ধানের পরিমাণ ৬ লাখ ৫০ হাজার টন এবং ১০ লাখ টন চাল। কিন্তু সরকার যে মূল্য ঘোষণা করেছে তার চেয়ে বেশিতে বাজারে ধান-চাল কেনাবেচা হচ্ছে। যে কারণে কৃষক সরকারের এই সংগ্রহ কর্মসূচিতে পুরোপুরি সাড়া না দেওয়ায় লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নিয়ে শঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে। কৃষকরা বেসরকারি ব্যবসায়ীদের কাছে ধান বিক্রি করছেন বেশি।

খাদ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাবে ২ আগস্ট পর্যন্ত ১১ লাখ ৪৭ হাজার ৭২৬ টন ধান চাল সংগ্রহ করতে পেরেছে সরকার। এখন সংগ্রহ বাকি আছে ৪ লাখ ৫২ হাজার ২৭৪ টন ধান-চাল। এরই মধ্যে চলতি আগস্টে সরকারি সংগ্রহের মেয়াদ শেষ হচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে, বাকি ২৮ দিনে উল্লিখিত পরিমাণ খাদ্য সংগ্রহ করা সম্ভব হবে না। যেটুকু সংগ্রহ করেছে এর মধ্যে বোরো ধান ৩ লাখ ২২ হাজার ৫১ টন, সিদ্ধ বোরো চাল ৭ লাখ ৬৪ হাজার ৫২৪ টন, বোরো আতপ চাল ৬১ হাজার ১৫১ টন।

নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ধান-চাল সংগ্রহের ঘাটতির কারণে মজুত পরিস্থিতির ওপর এক ধরনের চাপ সৃষ্টি হয়েছে। ২ আগস্ট পর্যন্ত সরকারের ভান্ডারে মোট ১৫ লাখ ৬৪ হাজার টন খাদ্যশস্য মজুত আছে। এর মধ্যে চাল হচ্ছে ১২ লাখ টন, ধান ১ লাখ ৮৮ হাজার টন এবং গম ২ লাখ ৪২ হাজার টন।

সাধারণ নিরাপদ মজুত হিসাবে ভান্ডারে অন্তত ২০ লাখ টন ধান চাল রাখতে চায় সরকার। কারণ বিভিন্ন বাহিনীর রেশন, নিু আয়ের মানুষের জন্য খোলাবাজারে ন্যায্যমূল্যে খাদ্য বিতরণ কর্মসূচি-(ওএমএস), কাবিখা, বিনামূল্যে খাদ্য বিতরণ কর্মসূচি ও করোনায় নানা কর্মসূচিতে সহায়তা হিসাবে খাদ্য দেওয়া হচ্ছে। এতে ১৫ থেকে ২০ লাখ টন খাদ্য বিতরণ করা হবে। কিন্তু সে অনুপাতে সরকারের ভান্ডারে খাদ্য কম আছে।

এমন পরিস্থিতিতে বুধবার ৫০ হাজার টন নন-বাসমতি সিদ্ধ চাল আমদানির অনুমোদন দিয়েছে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। আমদানিকৃত চালের কেজির দাম পড়বে ৩২ টাকার কিছু বেশি। অর্থাৎ প্রতি টনের আমদানি মূল্য হচ্ছে ৩৭৭.৮৮ ডলার। এতে মোট ব্যয় হবে ১৬০ কোটি টাকা। ভারতের বাগাদিয়া ব্রাদার্স লিমিটেড থেকে এই চাল কেনা হবে। সব ধরনের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে এক থেকে দেড় মাসের মধ্যে এ চাল দেশে পৌঁছাবে।

খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, করোনার কারণে চাল আমদানিতে নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়। অনেক ক্ষেত্রে চাল পাওয়া যায় না। এর আগেও এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। যে কারণে মজুত কমার আগেই সরকার চাল আমদানির উদ্যোগ নিয়েছে। চলতি অর্থবছরে (২০২১-২২) সরকারিভাবে চাল আমদানির লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ৩ লাখ টন। এ খাতে বাজেটে বরাদ্দ আছে ১ হাজার ১৪৮ কোটি টাকা। অর্থবছরের শুরুতে অর্থাৎ পহেলা জুলাই থেকে ২ আগস্ট পর্যন্ত আমদানি করা হয় ১ লাখ ৪৮ হাজার টন।

এর বাইরে আরও ৫০ হাজার টন আমদানির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। গত অর্থবছরে চাল আমদানি করা হয়েছিল ১৩ লাখ ৪৯ হাজার টন।

উল্লেখ্য, চলতি অর্থবছরে ৩ কোটি ৯৮ লাখ টন খাদ্যশস্য উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। এর মধ্যে বোরো মৌসুমের চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ২ কোটি ৫ লাখ টন, আমনের লক্ষ্যমাত্রা ১ কোটি ৫৬ লাখ টন এবং আউশ ৩৬ লাখ টন।