Main Menu

দেশে বড় বিপর্যয় হতে পারে ‘লোকাল ভেরিয়েন্টে’ও

প্রতিবেশী দেশ ভারতে সংক্রমণের তুঙ্গে থাকা করোনাভাইরাসের ‘ভারতীয় ভেরিয়েন্ট’-এর চেয়েও অন্যান্য ভেরিয়েন্ট বেশি ছড়িয়েছে বলে ভারতীয় ও অন্যান্য দেশের বিশেষজ্ঞরা আগে বিতর্কে জড়িয়েছিলেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কিংবা অন্য কোনো আন্তর্জাতিক সংস্থাও এখন পর্যন্ত ভারতে বিপর্যয়ের কারণ হিসেবে শুধুই ‘ভারতীয় ভেরিয়েন্ট’ বা ‘বেঙ্গল ভেরিয়েন্ট’কে দায়ী করছে না। বরং আগের ভেরিয়েন্টের অবাধ ও উপর্যুপরি মিউটেশনের সঙ্গে ভারতীয় ভেরিয়েন্ট যুক্ত হয়ে সংক্রমণ আকাশচুম্বী হয়েছে বলে মত বিভিন্ন পর্যায়ের বিশেষজ্ঞদের। বাংলাদেশের বিজ্ঞানীরাও একই অভিমত তুলে ধরে বলেছেন, দেশে এপ্রিলের প্রথম ভাগে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ যে গতিতে ওপরে উঠে গিয়েছিল, সেটা সময়মতো কঠোর ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে ভারতের চেয়ে বড় অঘটন ঘটাতে সক্ষম ছিল। ওই বিজ্ঞানীদের মতে, বাংলাদেশে আগে থেকেই অবস্থান করা ভেরিয়েন্ট, যা একরকম লোকাল ভেরিয়েন্ট হয়ে গেছে, তা যদি অবাধে ছড়ানোর সুযোগ পেয়ে যায়, তবে ভারতের চেয়েও ভয়ংকর বিপর্যয় ঘটার ঝুঁকি রয়েছে। এ ক্ষেত্রে ভারতীয় ভেরিয়েন্টের বিস্তার ঘটলে তা শুধুই গতি বাড়াবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি সরকারি গবেষণাগারের জ্যেষ্ঠ বিজ্ঞানী বলেন, ‘আমরা ভারতীয় ভেরিয়েন্টের চেয়েও দেশে ঘাঁটি গেড়ে থাকা আগের ভেরিয়েন্ট নিয়েই বেশি উদ্বিগ্ন; যেগুলো নিয়মিত মিউটেশনের মাধ্যমে এক ধরনের লোকাল ভেরিয়েন্টই হয়ে গেছে। যদিও আমরা আলাদা কোনো নাম দিইনি।’

অন্যদিকে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) পরিচালক অধ্যাপক ড. তাহমিনা শিরীন উদাহরণ দিয়ে বলেন, ‘আমাদের এখানে প্রমাণ হয়ে গেছে যে ভেরিয়েন্ট যেটাই হোক, যদি ঠেকানোর জন্য উপযুক্ত কার্যকর ব্যবস্থা না রাখা হয় বা অবাধে বিস্তারের সুযোগ পায়, তবেই সংক্রমণ লাফিয়ে লাফিয়ে ওঠে। আবার পর্যটন এলাকা, জনসমাগম, জনবহুল পরিবহন ও মার্কেট বন্ধ রাখার ফলে সংক্রমণ কমে আসে।’

ওই বিজ্ঞানী বলেন, ‘ভারতে যে হারে সংক্রমণ ছড়িয়েছে, আমাদের এখানে এপ্রিলে এর চেয়েও দ্রুতগতিতে সংক্রমণ উঁচুতে উঠে গিয়েছিল। এ ক্ষেত্রে ভারতীয় ভেরিয়েন্ট যদি ছড়ানোর পথ আমরা বন্ধ রাখতে পারি, তবে ওই ভেরিয়েন্ট আমাদের তেমন কিছু করতে পারবে না, যেমনটা হয়েছে যুক্তরাজ্যের ভেরিয়েন্টের ক্ষেত্রে। আমরা দেশে যুক্তরাজ্যের ভেরিয়েন্ট আসার পরপরই তা আটকে দিতে পেরেছি বলে এখানে তা ছড়াতে পারেনি।’

ড. শিরীন বলেন, ‘এখনো ভারতীয় যে ভেরিয়েন্ট দেশে শনাক্ত হয়েছে, সেটা দুজন ছাড়া অন্যদের মধ্যে পাওয়া যায়নি। ফলে এটা যে ছড়িয়েছে তা এখনো বলতে পারছি না। তবে সবারই সতর্ক থাকা জরুরি। বিশেষ করে ঠিকভাবে মাস্ক পরা, জনসমাগম এগিয়ে চলা ও টিকা নেওয়ার নির্দেশনা মেনে চললে যে ভেরিয়েন্টই হোক, ছড়ানোর সুযোগ থাকবে না।’

প্রায় একই সুরে খ্যাতিমান অণুজীববিজ্ঞানী ড. সমীর কুমার সাহা বলেন, ‘ইউকে ভেরিয়েন্ট নিয়েও আমাদের অনেক উদ্বেগ ছিল। কিন্তু শুরুতে সেটা ধরতে পেরেছিলাম বলে ইউকে ভেরিয়েন্ট অনেক দেশে মারাত্মক ক্ষতি করলেও আমাদের দেশে ক্ষতির কারণ হতে পারেনি। কিন্তু যে আফ্রিকান ভেরিয়েন্ট নিয়ে আমরা ইউকে ভেরিয়েন্টের তুলনায় কম শঙ্কিত ছিলাম, সেই আফ্রিকান ভেরিয়েন্টই আমাদের আগের ভেরিয়েন্টের সঙ্গে মিশে অবাধে বেপরোয়াভাবে ছড়ানোর সুযোগ পেয়ে সংক্রমণ ভয়ানক দিকে নিয়ে যাচ্ছিল।’

এই বিজ্ঞানী বলেন, ‘ভারতীয় ভেরিয়েন্ট দেশে শনাক্ত হয়েছে এবং সরকার তা দ্রুত সময়ের মধ্যেই মানুষকে জানিয়ে দিতে পেরেছে, এটা খুবই ইতিবাচক একটি দিক। তবে আমরা জোর দিয়েই বলতে চাই, কেবল ভারতীয় ভেরিয়েন্টের দিকে তাকিয়ে থাকলে ভুল হবে। বরং গত কয়েক দিন ধরে যেভাবে ঢাকাসহ সারা দেশে মানুষের অবাধ বিচরণ চলছে, তাতে আগের ভেরিয়েন্টই বিপজ্জনকভাবে লাফিয়ে ওঠার উপক্রম হয়েছে। যেকোনো মূল্যেই হোক মানুষের ঢল বা করোনাভাইরাসের বিস্তারের পথ বন্ধ না করলে বিপদ আসবেই।’