Main Menu

ক্যাসিনো কেলেঙ্কারিতে দেশ ছেড়েছেন বিতর্কিত অর্ধ শতাধিক ব্যক্তি

রাজধানীসহ সারা দেশে ক্যাসিনো-মদ ও জুয়ার আসরসহ অবৈধ ব্যবসা, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করেছে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। ইতিমধ্যে এপথে বিপুল অর্থ বিত্তের মালিক বনে যাওয়া বেশ কয়েকজন সরকারি দলের নেতা গ্রেফতার হয়েছেন। গ্রেফতার এড়াতে গা-ঢাকা দিয়েছেন এসব অপকর্মের মূল হোতা ও জড়িত বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা। জানা গেছে, ইতিমধ্যে অর্ধ শতাধিক বিতর্কিত ব্যক্তি দেশ ছেড়েছেন। তাদের বিরুদ্ধে অবৈধ ক্যাসিনো ব্যবসার আড়ালে কোটি কোটি টাকা বিদেশে পাঁচার, চাঁদাবাজি, চোরাচালান, মাদক, টেন্ডারবাজি ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। পরিবার-পরিজন ফেলে ওইসব নেতারা সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ায় গেছেন। এসব দেশে রয়েছে তাদের সেকেন্ড হোম। তবে এখন আর কেউ বিদেশে পালিয়ে যেতে পারবেন না। তাদের বিদেশে যাওয়ায় নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।

ক্যাসিনো কেলেঙ্কারিতে জড়িত থাকায় ইতিমধ্যে যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে তাদের বক্তব্য এবং গোয়েন্দাদের অনুসন্ধানে একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসছে। অবৈধ ব্যবসা ও নানা অপকর্মে জড়িতদের মধ্যে অনুপ্রবেশকারীদের সংখ্যই সর্বাধিক। অবৈধ কোটি কোটি টাকার ভাগ আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসীরাও পেতেন। ক্ষমতাসীন দলের নেতার ছত্রছায়ায় টাকার ভাগ হতো। আর এসব অবৈধ ব্যবসার আড়ালে বিদেশে কোটি কোটি টাকা পাচার করা হয়েছে। কারো কারো বিদেশে ১৩/১৪টি ব্যাংক একাউন্ট থাকার তথ্যও পাওয়া গেছে। একই সঙ্গে নেপথ্যে থেকে অবৈধ অস্ত্রও আনা হয়েছে। আটক সেলিম প্রধানের কোটি কোটি টাকা থাইল্যান্ডে যেত শাহীন চৌধুরীর মাধ্যমে। ব্যাংককের একটি ব্যাংকের মাধ্যমে টাকা যেতো। শাহীন চৌধুরী চট্টগ্রামের সাধারণ পরিবারের সন্তান। তার গুরু বাবর। তিনি মাদক ব্যবসায় জড়িত ছিলেন। এক নেতার ছত্রছায়ায় টাকার পাহাড় গড়েছেন। গুলশানে তার আলিশান বাড়ি। শ্যামপুর-কদমতলী এলাকায় মামা গ্রুপের সন্ত্রাসীরা এখন পলাতক। খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া, লোকমান হোসেন ও শফিকুল আলম ফিরোজের সহযোগী সন্ত্রাসীরা এখন পলাতক। তারা বাজেটের সমান টাকার পাহাড় গড়েছেন।

র‌্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ বলেন, সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে। দুর্নীতি নয়, সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের বিরুদ্ধেই আমাদের অভিযান। তিনি বলেন, অপেক্ষা করুন, সামনে বড় ধরনের অভিযান আসছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ক্ষমতায় আসার পর রাজধানীর ফুটপাত, বাসষ্ট্যন্ড, নৌ ও রেলপথের টার্মিনাল, শিক্ষা অধিদফতর, গণপূর্ত অধিদফতর, রাজউক, নৌপরিবহন অধিদফতরসহ সরকারের উন্নয়ন কর্মকান্ডের দফতরগুলোর নিয়ন্ত্রণ নেন আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, শ্রমিকলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগসহ কয়েকটি সংগঠনের নেতারা। চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, জায়গা দখল, বাড়ি দখল, নদী দখল, ক্লাব পরিচালনার নামে ক্যাসিনো ব্যবসা খুলে বসেন ওই সব নেতা। এসব অপকর্মের হোতাদের প্রত্যেকেরই রয়েছে লাইসেন্স করাসহ অবৈধ অস্ত্র। আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতা ও স্থানীয় এমপিদের কমিশন দিয়ে অন্তত আট বছর ধরে আধিপত্য চালাচ্ছেন তারা। তাদের অপকর্মের প্রতিবাদ করতে গিয়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছেন। একাধিক হত্যাকান্ডের প্রমাণও মিলেছে। সরকারি দফতরগুলো নিয়ন্ত্রণসহ একশ্রেণির নেতা সারাদেশে মাদকের সামাজ্য গড়ে তুলেছেন। যা নিয়ে আওয়ামী লীগের সর্বশেষ নীতি নির্ধারণী বৈঠকে দলের শুদ্ধি অভিযান চালানোর নির্দেশ দেন শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনার পর তত্পর হয়ে উঠে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তারা রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার স্পোর্টস ক্লাবে ক্যাসিনো ব্যবসা, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি করে বিপুল পরিমান অবৈধ অর্থ উপার্জন করেন। এর মধ্য থেকে যুবলীগ, কৃষক লীগের একাধিক নেতাকের গ্রেফতার করা হয়। এর মধ্যে রয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ চৌধুরী, কেন্দ্রীয় যুবলীগের নামধারী নেতা ও প্রভাবশালী ঠিকাদার জি কে শামীম, কেন্দ্রীয় কৃষক লীগের সদস্য শফিকুল আলম ফিরোজ, মোহামেডান ক্লাবের পরিচালক লোকমান হোসেন ও সেলিম প্রধান। জানা গেছে, রাজধানীতে আধিপত্য বিস্তারে শীর্ষে রয়েছে যুবলীগ। বিএনপি-জামায়াত সরকারের সময় যুবদলের নিয়ন্ত্রিত এলাকাগুলো প্রথমেই আয়ত্ত্বে নেয় যুবলীগ। এরপর সময়ের সঙ্গে বাড়তে থাকে যুবলীগের সাম্রাজ্য। বিশেষ করে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায় যুবলীগের রাজনীতি মানে রাতারাতি বিত্তশালী বনে যাওয়া। গোটা এলাকার প্রতিটি ওয়ার্ড নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন যুব সংগঠনটির নেতারা।

সরকার প্রধানের কড়া হুঁশিয়ারি এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানের পর লাপাত্তা রাজধানীর চিহ্নিত চাঁদাবাজ ও হাইব্রিডরা। গত ১৮ সেপ্টেম্বর বুধবার রাজধানীর ফকিরাপুলে ইয়ংমেনস ক্লাব, ওয়ান্ডারার্স ক্লাব, গুলিস্তানের মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়া চক্র ও বনানীর গোল্ডেন ঢাকা ক্লাবে অভিযান চালায় র্যাব। এরমধ্যে ওয়ান্ডারার্স ক্লাবটি পরিচালনা করতেন ৯ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মমিনুল হক। এই ক্লাবে নিয়মিত ক্যাসিনো, জুয়া, মাদকের আসর বসত। যুবলীগ নেতা মমিনুল হক সাঈদ মতিঝিল দিলকুশাসহ আরামবাগ ফকিরাপুলের ক্লাবপাড়ার অভিযান শুরুর পর থেকে লাপাত্তা। জানা গেছে, তিনি দেশ ছেড়ে সিঙ্গাপুরে অবস্থান করছেন।