Main Menu

কে জিতলেন ইমরান না মোদি?

গত কয়েকদিন ধরে বিশ্ববাসীর সবার নজর ভারত-পাকিস্তানের দিকে। যদিও দু’দেশের মধ্যকার সেই উত্তেজনা অনেকটা প্রশমিত হয়েছে। হেফাজতে থাকা ভারতীয় বিমান বাহিনী পাইলট অভিনন্দনকে মুক্তি দেওয়ার কথা যখন বৃহস্পতিবার ঘোষণা করেছিলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান, তখন থেকেই ভারতে ফেসবুক-টুইটারসহ সামাজিক গণমাধ্যমেও এ নিয়ে ব্যতিব্যস্ত এবারের যুদ্ধে কে জিতলেন?

অনেকে খোলাখুলি ইমরান খানের প্রশংসা করছেন। আবার, কট্টর ভারতীয়দের মতে, মোদির দৃঢ়চেতা নেতৃত্বের কারণেই পাকিস্তান বিনা শর্তে পাইলটকে ফেরত দিচ্ছে।

ফেসবুক টুইটারের মতো সামাজিক মাধ্যম হোক বা হোয়াটসঅ্যাপের মতো যোগাযোগ মাধ্যম – সব মাধ্যমেই গত ৪-৫ দিন ধরে চর্চার বিষয় মূলত একটাই – ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা।
পাকিস্তানের সীমানায় ঢুকে ভারতীয় বিমান থেকে যখন বোমাবর্ষণ হল, সেইদিনটা ছিল নরেন্দ্র মোদির পক্ষ নিয়ে ব্যাপক উচ্ছ্বাস প্রকাশের দিন। পরের দিন আবার ভারতের আকাশসীমা অতিক্রম করে পাকিস্তানি বিমান ঢুকে পড়ায় সেই উচ্ছ্বাসে ভাটা পরেছিল একটু।

আর উত্তেজনাময় তৃতীয় দিন, বৃহস্পতিবার যখন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান ঘোষণা করলেন যে গ্রেপ্তার হওয়া পাইলটকে মুক্তি দেবেন তারা, সেদিন পাল্লাটা যে কোন পক্ষে ভারি, সেটা গবেষণার বিষয়।

এক ফেসবুক ব্যবহারকারী অমিতাভ আইচ লিখেছেন, ‘১৯৮১ সালে যখন পাকিস্তানে খেলতে যায় ভারত, তখন রিভার্স সুইং সম্বন্ধে কোনো ধারণা ছিল না। ইমরান খানেরই আবিষ্কার ওটা। গুন্ডাপ্পা বিশ্বনাথের মতো ব্যাটসম্যান, যাকে ফাস্ট বোলিং সামলানোর অন্যতম সেরা বলে মনে করা হত, তিনি বারেবারেই ওই রিভার্স সুইংয়ে আউট হয়ে যাচ্ছিলেন। তার ক্যারিয়ারই এক রকম শেষ হয়ে গিয়েছিল ইমরানের ওই বলে।’

মি আইচ বিবিসিকে বলেন, ‘গুন্ডাপ্পা বিশ্বনাথের ক্যারিয়ারই ইমরানের খানের রিভার্স সুইং আর ইনডীপারের সামনে প্রায় হারিয়ে গেল, তাহলে নরেন্দ্র মোদির কী হবে, সেটাই ভাবছি।”

নরেন্দ্র মোদি এবং বিজেপির পক্ষ নিয়ে নিয়মিতই ফেসবুক পোস্ট করেন বিজেপির এক নেতা দীপ্তিমান সেনগুপ্ত। তার কথায়, “পাকিস্তান নানা উগ্রপন্থী সংগঠনকে দিয়ে একটা ইয়র্কার দিতে গিয়েছিলেন, কিন্তু নরেন্দ্র মোদি নিঃসন্দেহে একটা ছক্কা মেরেছেন। আমাদের কিছু সৈনিক মারা গেছেন ঠিকই, কিন্তু দেশ একত্রিত হয়ে গেছে। ১৯৪৭ এর পর থেকে এত বড় চাপ পাকিস্তানের ওপরে আর কেউ তৈরি করতে পারেনি।”

সামাজিক মাধ্যমে খুবই অ্যাক্টিভ কলকাতার অধ্যাপক গর্গ চ্যাটার্জী। তিনি অবশ্য কে হারল কে জিতল তার বাইরে গিয়ে একটু অন্যভাবে দেখতে চান এই ঘটনাক্রমে।

তিনি বলেন, “একটা যুদ্ধে উভয় পক্ষেরই সাধারণ মানুষই হারে। তবে এক্ষেত্রে বলব যে পাকিস্তানে বেশ কিছু সন্ত্রাসবাদী সংগঠনের ঘাঁটি রয়েছে, সেই দেশই যখন একজন ভারতীয় পাইলটকে ছেড়ে দেয়, তাতে বলাই যায় অ্যাডভান্টেজ পাকিস্তান। কারণ তারপরে ভারতের বাহিনীও কিন্তু বলেছে এরপরে আর আগ্রাসন না হলে তারাও আর কিছু করবে না ”

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক কাকলি সেনগুপ্তও নজর রেখেছিলেন সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশিত মতামতগুলির ওপরে। তিনি বলছেন, “ইমরান খানের ঘোষণার পরে সামাজিক মাধ্যমে নানাভাবে সেটাকে ব্যাখ্যা করছেন মানুষ। এইরকম দুটি দেশের মধ্যে যখন একটা উত্তেজনাকর পরিস্থিতি থাকে, তার মধ্যেই যদি কোনও পক্ষ একটা শান্তির বার্তা দেয়, তাহলে তাদের একটা আশঙ্কা থাকেই যাতে অপর পক্ষ সেই বার্তাটাকে তাদের দুর্বলতা হিসেবে না দেখে। আবার অন্য দেশটিও ব্যাখ্যা করতে পারে যে তাদের কাছে মাথা নোয়াতে হল অন্য দেশটিকে।”

“আমার মতে এভাবে বিষয়টাকে ব্যাখ্যা করাই উচিত নয়। কারণ যখন ঐতিহাসিকভাবেই বৈরিতা আছে এমন দুটি দেশের মধ্যে উত্তেজনা প্রশমন করাটাই সবথেকে জরুরি। প্রয়োজন আলোচনায় বসার,” বলছিলেন মিজ সেনগুপ্ত।

সামাজিক মাধ্যমে যেমন নানা জন নানা মত প্রকাশ করছেন ভারত পাকিস্তানের মধ্যকার এই কদিনের উত্তেজনা নিয়ে, তেমনই চলছে বেশ কিছু হ্যাশট্যাগও – হাজার হাজার টুইট করছেন সেখানে মানুষ – কেউ আবার নানা ধরণের কার্টুনও শেয়ার করছেন।

সব মিলিয়ে মনে হচ্ছে ভারতের পশ্চিম সীমান্তে যুদ্ধ না হলেও ফেসবুক টুইটারে রীতিমতো যুদ্ধই বেধে গেছে ভারত পাকিস্তানের দুই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আর ইমরান খানের পক্ষে এবং বিপক্ষে। সূত্র: বিবিসি বাংলা