Main Menu

কেন বাবুনগরীর এই পরিণতি ?

চট্টগ্রামের হাটহাজারীর প্রাচীন ধর্মীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আল জামেয়াতুল আহলিয়া দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম মাদ্রাসার সহযোগী পরিচালক পদ হারিয়েছেন হাফেজ মাওলানা জুনায়েদ বাবুনগরী। এই মাদ্রাসাটির মহাপরিচালক শাহ আহমদ শফীর নেতৃত্বে বুধবার শুরার বৈঠকে তাকে অব্যাহতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।

মাদ্রাসাটির সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিভিন্ন সময়ে শাহ আহমদ শফীর বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ায় এই পরিণতি মাওলানা জুনায়েদের। যদিও তার অনুসারীরা বলছেন, তিনি ষড়যন্ত্রের শিকার, দাবি আদায়ে কঠোর অবস্থানে থাকায় সরকারি চাপে তাকে সরানো হয়েছে।

জানা গেছে, চট্টগ্রামের আল জামিয়াতুল আহলিয়া দারুল উলূম মুঈনুল ইসলাম মাদ্রাসাটি হাটহাজারী মাদ্রাসা নামেই বেশি পরিচিত। মাদ্রাসাটির মহাপরিচালকের দায়িত্বে আছেন শাহ আহমদ শফী, যিনি একই সঙ্গে হেফাজতে ইসলামের আমির। এছাড়াও তিনি দেশের বৃহৎ কওমি মাদ্রাসা বোর্ড বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশের চেয়ারম্যান। এছাড়া সরকার স্বীকৃত আল-হায়াতুল উলি লিল-জামায়াতিল কাওমিয়া বাংলাদেশ’ এর চেয়ারম্যানও তিনি। অন্যদিকে মাওলানা জুনায়েদ বাবুনগরী হাটহাজারী মাদ্রাসার একজন জ্যেষ্ঠ শিক্ষক। তিনি একইসঙ্গে হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব। হেফাজতের মহাসচিবের দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে আহমদ শফীর আরও ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠেন মাওলানা জুনায়েদ। হাটহাজারী মাদ্রাসায় পূর্বে সহকারী পরিচালকের পদ ছিল না।

২০১৭ সালের জুলাই মাসে মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির মজলিশে শুরার বৈঠকে সিদ্ধান্ত নিয়ে মাওলানা জুনায়েদকে সহকারী পরিচালকের দায়িত্ব দেওয়া হয়। আহমদ শফী বেশির ভাগ সময় বার্ধক্যজনিত কারণে অসুস্থ থাকায় তাকে সহায়তার জন্য মাওলানা জুনায়েদকে এ দায়িত্ব দেওয়া হয়। অন্যদিকে ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত বেফাকের (বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া) ১০ম কাউন্সিলে নতুন করে গঠিত কমিটিতেও পদ পান জুনায়েদ।

জানা গেছে, বুধবার (১৭ জুন) সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত হাটহাজারী মাদ্রাসার মজলিসে শুরার বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। মজলিশে শুরার বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় আজীবন পদে বহাল থাকবেন আহমদ শফী। এছাড়া বৈঠকে জুনায়েদ বাবুনগরীকে সহকারী পরিচালকের পদ থেকে অব্যাহতি হয়। মাদ্রাসাটির সিনিয়র মুহাদ্দিস শেখ আহমদকে সহকারী পরিচালকের দায়িত্ব দেওয়া হয়।

সূত্র জানায়, জুনায়েদ বাবুনগরীর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে তিনি সহকারী পরিচালক হওয়ার পর মাদ্রাসার মহাপরিচালক হওয়ার জন্য তৎপর হয়ে উঠেন। মাদ্রাসার ভেতর ও বাইরে তাদের অনুগতদের নিয়ে সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন। মাদ্রাসা থেকে ছুটি না নিয়েই তিনি ব্যক্তিগত কাজে সময় ব্যয় করেছেন। জুনায়েদ বাবুনগীরর তাফসীর ও উলূমে হাদিস বিভাগের দুটি বিষয়ে পাঠদানের ক্ষেত্রেও উদাসীনতার অভিযোগ উঠেছে। এছাড়া মাদ্রাসার সদন ও ভাউচারে সই করার ক্ষেত্রেও অবহেলা করেছেন।জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরেই শাহ আহমদ শফীর সঙ্গে বিরোধে জড়িয়েছেন মাওলানা জুনায়েদ বাবুনগরী। তবে বিগত কয়েক বছরে এ বিরোধ দৃশ্যমান হয়ে উঠে। অভিযোগ রয়েছে, বয়োবৃদ্ধ আহমদ শফীর অবর্তমানে তার স্থানে অধিষ্ঠিত হতে তৎপর হয়ে উঠেন মাওলানা জুনায়েদ। হেফাজতের বিভিন্ন সাংগঠনিক বিষয়েও আহমদ শফীর সঙ্গে বিরোধে জড়িয়েছেন মাওলানা জুনায়েদ। সর্বশেষ গত ১৬ মে দুপুরে শাহ আহমদ শফী গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। সেদিন মাদ্রাসার মসজিদে জোহরের নামাজের পর মাওলানা জুনায়েদের অনুসারীরা তাকে মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত পরিচালক হিসেবে ঘোষণা দেন। পরবর্তীতে এ ঘোষণায় ক্ষুব্ধ হন আহমদ শফী, অসুস্থতার মধ্যেও ভিডিও বার্তায় তিনি জানিয়ে দেন কাউকে ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়নি।

করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে সরকার মুসল্লিদের মসজিদে না যাওয়ার নির্দেশনা সরকার দিলে তাতে সমর্থন জানিয়ে ৬ এপ্রিল বিবৃতি দেন শাহ আহমদ শফী। তবে তার দুদিন পর ৮ এপ্রিল মসজিদ খুলে দিতে জুনায়েদ বাবুনগরী তার ১৪ জন সমর্থক ও অনুসারীদের নিয়ে বিবৃতি দেন। এর আগেও কওমি মাদ্রাসার সনদের স্বীকৃতির বিরোধী অবস্থানে ছিলেন মাওলানা জুনায়েদ।তবে এসব বিষয়ে কওমি অঙ্গনে নানা রকমের আলোচনার জন্ম দিলেও কেউ প্রকাশে কথা বলতে রাজি হননি। হেফাজতে ইসলামের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কেন্দ্রীয় নেতা ও চট্টগ্রামের আলেম বলেন, আমরা এ বিষয়গুলোকে আর সামনে আনতে চাই না। যা হয়েছে, হয়ে গেছে, আর আলোচনার দরকার নেই। আমাদের সবার নেতা আল্লামা শাহ আহমদ শফী। তিনি অসুস্থ। হুজুরের (আহমদ শফী) এই সংকটময় মুহূর্তে কিছু মানুষ তার স্থান দখলের অপচেষ্টায় লিপ্ত। তাদের এ চেষ্টা দীর্ঘদিনের। শুরা সদস্যরা বৈঠক করে যথার্থ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। জুনায়েদ বাবুনগরী তার কৃতকর্মের ফল পেলেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জুনায়েদ বাবুনগরীর একাধিক অনুসারী বলেন, ‘বিগত এক মাস ধরে হাটহাজারী মাদ্রাসায় যাই ঘটুক, শুরার বৈঠকে যদি যথাযথ প্রক্রিয়ায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হতো তাহলে বিতর্ক সৃষ্টি হতো না। আসলেই কী শুরার বৈঠক থেকে সিদ্ধান্ত হয়েছে নাকি অন্য কোথাও থেকে হয়েছে। ঢাকার ফরিদাবাদ মাদ্রাসা থেকে হেলিকপ্টারে চড়ে শুরার বৈঠকে একজন অংশ নিয়েছিলেন। বৈঠক শেষে তিনি রেজুলেশন গণমাধ্যমকে জানান। যদিও আরেক শুরা সদস্য নোমান ফয়েজী জানিয়েছেন এমন কোনও রেজুলেশনই হয়নি। ফলে জুনায়েদ বাবুনগরীকে বাদ দেওয়ার পরিকল্পনার নিয়ে যে সন্দেহ ছিল তা সত্য প্রমাণ হলো।