Main Menu

‘কতটা অমানবিক হলে পুরো বাড়িকে চোরাকারবারির বলে চিহ্নিত করা যায়’

‘কতটা অমানবিক হলে পুরো বাড়িকে চোরাকারবারির বাড়ি বলে চিহ্নিত করা যায়, একজনের অপরাধে পুরো বাড়ির মানুষকে অপরাধী বানিয়ে দেওয়া হয়, একজনের জন্য পুরো বাড়ির মানুষকে সমাজ থেকে আলাদা করা যায়’— বিজিবি ৫৫ ব্যাটালিয়ন কর্তৃক সাম্প্রতিক মাদক ও চোরাকারবারির বাড়ি উল্লেখ করে লোকজনের বাড়িতে টানানো কয়েকটি সাইনবোর্ড পরিদর্শন করে এ মন্তব্য করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সাবেক প্রসিকিউটর ও সোশ্যাল মিডিয়ার জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন।

বিজিবির এ সাইনবোর্ড লাগানো কেন্দ্র করে গত কয়েক দিন ধরেই দেশে ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে এ কাজ আইনের পরিপন্থী এবং মানবাধিকার লঙ্ঘন বলে সংবাদ প্রচার হলে বিষয়টি নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়। বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিজিবির এমন কাজে সমালোচনার ঝড় উঠে। এ অবস্থায় রোববার বেলা ১১টায় ব্যারিস্টার সুমন চুনারুঘাট উপজেলার আহম্মদাবাদ ইউনিয়নের চা বাগান এলাকার কয়েকটি সাইনবোর্ড পরিদর্শন করে এ লাইভ করেন।

আপলোড করা ভিডিওতে সুমন বিজিবির এ কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করেন। এ সময় বিজিবির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ জানান তিনি।

ভিডিও বার্তায় সুমন বলেন, আমার উপরে যে সাইনবোর্ডটি দেখছেন এটি কোনো সাধারণ মানুষ লাগায়নি, এটি লাগিয়েছে বিজিবি। আমার সামনের বাড়িকে তারা ‘চোরাকারবারির বাড়ি’ হিসেবে চিহ্নিত করে দিয়েছেন। যেহেতু এটি আমার এলাকা চুনারুঘাট, সেহেতু এই বাড়িটি যদি চোরাকারবারির হয়, আমার এলাকা হিসেবে আমিও চোরাকারবারি। এই এলাকার যারা নেতৃবৃন্দ আছেন তারাও চোরাকারবারি।

কতটা অমানবিক হলে এমন সাইনবোর্ড লাগানো যেতে পারে- এই প্রশ্ন তুলে সুমন বলেন, এই বাড়ির মানুষগুলো এখন না স্কুলে যেতে পারে, না কলেজে যেতে পারে। তাদের বলা হয় তোরা তো চোরাকারবারির বাড়ির লোক।

তিনি বলেন, সমাজপতিরা যখন একটি বাড়িকে সমাজচ্যুত করেন তখন আমরা হাইকোর্টে গিয়ে মামলা করি। সমাজপতিরা করলে আমরা ঘৃণা করি। বিজিবির লোকজন কীভাবে একটি পরিবারকে এভাবে সমাজচ্যুত করে দেয়। এই সাইনবোর্ডের মাধ্যমে পরিবারের পরবর্তী প্রজন্মকেও চোরাকারবারি বানিয়ে দিলেন। দেখেন কীভাবে এই ডিসিপ্লিনারি ফোর্স আমাদের দেশটাকে চালাচ্ছে।

‘একটা জিনিস আপনাদের বলতে চাই। চোরাকারবারির বাড়ির সামনে এমন সাইনবোর্ড লাগাতে পারলেন কিন্তু যুদ্ধাপরাধীর বাড়ির সামনে তো লাগাতে পারেন নাই। তারা যুদ্ধাপরাধী, দুর্নীতিবাজের বাড়িতে তো লিখেতে পারেনি তারা দুর্নীতিবাজ। যারা ব্যাংকে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট করে খাচ্ছে তাদের বাড়িতে তো লেখেননি তারা ব্যাংকের টাকা লুটপাটকারী। বিজিবির মধ্যে যাদের দুই নাম্বারি করে চাকরি গেছে তাদের বাড়িতে কেন লেখেননি দুই নাম্বারি করে তাদের চাকরি গেছে। আপনাদের এই সাহস নেই।’

বিজিবির বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে ব্যারিস্টার সুমন বলেন, বিজিবির কাজ ছিল বর্ডারে। আপনারা বর্ডারে কিছু পাশ দেন বলেই তো এসব পাচার হচ্ছে। অভিযোগ আছে, এই বর্ডার দিয়েই ইন্ডিয়া থেকে আসা প্রতি গরুতে আপনারা দুই হাজার টাকা করে পান। এই টাকা কোথায় যায়, সেটিও আমার জানা আছে। এসব কথা তো বলতে চাই না। এমনিতেই শত্রুর অভাব নাই, তখন আপনারাও শত্রু হবেন।

সুমন বলেন, আপনাদের বলতে চাই, অস্ত্র দিয়ে নয়, বিবেক দিয়ে সমাজটাকে ঠিক করেন। আপনারা আমাদের সম্প্রীতিটাকে নষ্ট করছেন, এলাকাটা কলঙ্কিত করে দিচ্ছেন।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি বলেন, আপনে অনেক জ্ঞানী মানুষ। আপনার আন্ডারের এসব ফোর্সদের বুঝান। তারা যা করে তা ঠিক না। সাইনবোর্ড মেরে এসব নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না। এসব নিয়ন্ত্রণ করতে হলে মানুষগুলোকে বিকল্প কর্মসংস্থান করে দেন।

দ্রুত এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং হবিগঞ্জের পুলিশ সুপারের কাছে অনুরোধ জানান ব্যারিস্টার সুমন।