Main Menu

এরদোয়ান-ম্যাক্রোঁ’র দ্বন্দ্বের শেষ কোথায়?

চলতি বছরে আলোচিত দুই ব্যক্তি তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান ও ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ। আপনি যদি বিশ্ব রাজনীতির পরিস্থিতি একটু বোঝেন, তবে এতক্ষণে কিছুটা হলেও আঁচ করতে পেরেছেন। নানা ঘটনায় একে অপরের সঙ্গে দ্বন্দ্বে ন্যাটোর অন্তর্ভুক্ত এই দুই দেশ।

কখনো লিবিয়া, সিরিয়া, পূর্ব ভূমধ্যসাগরের তেল গ্যাস অনুসন্ধান থেকে শুরু করে আজারবাইজান-আর্মেনিয়ার যুদ্ধের দামামাতেও নিজেদের মুখোমুখি অবস্থানে নিয়ে গেছে এই দুই পরাশক্তি। সবশেষ ইসলাম ধর্ম সঙ্কটে এবং ধর্ম নিয়ে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁ কটাক্ষ করায় বিশ্বজুড়ে সমালোচনার ঝড় বয়ে যাচ্ছে। এতেও ম্যাক্রোকেঁ তুলোধুনো করছেন এরদোয়ানসহ বিশ্ব নেতারা।

ইসলাম ধর্মে ম্যাক্রোঁ’র আঘাত :

ন্যাটো জোটের এই দুই সদস্য দেশের সম্পর্কের ক্রমশ অবনতিতে বিপদে পড়েছে ওই জোটটি। সবশেষ ইসলামিক বিচ্ছিন্নতাবাদের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন ম্যাক্রোঁ। ইসলাম এবং মুসলিমদের প্রতি মাক্রোঁর দৃষ্টিভঙ্গির সমালোচনা করে ফরাসি প্রেসিডেন্টের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে প্রশ্ন তোলেন এরদোয়ান। ফরাসি প্রেসিডেন্টকে মানসিক স্বাস্থ্য পরীক্ষার পরামর্শ দেন তুর্কি প্রেসিডেন্ট। এর প্রতিবাদ জানিয়ে আঙ্কারায় নিযুক্ত ফরাসি রাষ্ট্রদূতকে প্যারিসে ডেকে পাঠায় ম্যাক্রোঁ’র দফতর।

ইসলাম ধর্ম নিয়ে নেতিবাচক বক্তব্যের জেরে ফরাসি পণ্য বয়কটের ডাক দিয়েছেন এরদোয়ান। শুধু এরদোয়ানই নয় পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানসহ সাধারণ মানুষও চটেছেন তার ওপর।

আজারবাইজান-আর্মেনিয়া যুদ্ধ:

গেল ২৭ সেপ্টেম্বর থেকে রাশিয়ার মিত্র আর্মেনিয়া ও তুরস্কের মিত্র আজারবাইজানের মধ্যে প্রবল সংঘাত চলছে বিতর্কিত অঞ্চল নাগার্নো-কারাবাখ নিয়ে। যুদ্ধের শুরুতেই আজারবাইজানকে পূর্ণ সমর্থন দিয়ে আসছে তুর্কি প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান। বাকো’কে সামরিক সরঞ্জাম দিয়ে সহায়তা করছে তুরস্ক, এমন অভিযোগ ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ’র। এমনকি সিরিয়ায় থাকা তুর্কি বাহিনী আজারবাইজানের হয়ে লড়াই করে আসছে, দাবি করেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট। এরদোয়ান আজারি বাহিনীর পক্ষ নিয়ে সেখানকার পরিস্থিতিকে ‘বিপজ্জনক’ অবস্থায় ঠেলে দিচ্ছে মনে করেন ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ।

এই বিরোধ মেটাতে মিনস্ক গ্রুপ নামে একটি মধ্যস্থতাকারী দল কয়েক বছর ধরে আলোচনা চালিয়ে আসছে যাতে নেতৃত্ব দিচ্ছে রাশিয়া, ফ্রান্স, যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপে নিরাপত্তা ও সহযোগিতা বিষয়ক সংস্থা ওএসসিই। তুরস্কের বক্তব্য এত বছরের কূটনৈতিক চেষ্টা ও রাজনৈতিক আলাপ আলোচনার পরেও এই সঙ্কটের কোনো সমাধান হয়নি। তাই নাগোর্নো-কারাবাখ থেকে আর্মেনীয় বাহিনীকে হটিয়ে আজারবাইজান যদি ওই অঞ্চল দখল করে নেয় সেটাই হবে দীর্ঘদিন ধরে চলা সঙ্কটের একমাত্র সমাধান এবং এর পরেই সেখানে স্থিতি ও শান্তি ফিরে আসবে। এছাড়া ভৌগলিক কৌশলগত কারণে আজারবাইজান তুরস্কের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার।

ইমানুয়েলর দাবি, নাগার্নো-কারাবাখে তুরস্কের যুদ্ধংদেহী মনোভাবে ফ্রান্স উদ্বিগ্ন। সেখানে এরদোয়ান সরকারের এমন শক্ত অবস্থা মেনে নেবে বলে হুঁশিয়ারিও দেন ম্যাক্রোঁ।

পূর্ব-ভূমধ্যসাগরে ফ্রান্স-তুরস্কের লড়াই:

বছরের মাঝামাঝিতে পূর্ব-ভূমধ্যসাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান নিয়ে গ্রিসের সঙ্গে তুরস্কের উত্তেজনা চরমে পৌঁছায়। এতে যোগ দেয় ফ্রান্স। এমনকি ভূমধ্যসাগরের সামরিক উপস্থিতি পোক্ত করতে দুটি রাফাল যুদ্ধবিমান ও নৌবাহিনীর একটি রণতরী পাঠানোর ঘোষণা দেয় প্যারিস। এতে তুরস্কের সঙ্গে গণ্ডগোল বেঁধে যাওয়ার উপক্রম হয় ফ্রান্সের। ম্যাক্র্যোঁকে সতর্ক করে এরদোয়ান বলেন, পূর্ব ভূমধ্যসাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান নিয়ে কোন ধরনের ঝামেলা না করতে। তবে সতর্কবার্তা উপেক্ষা করেই গ্রিসকে তুরস্কের বিরুদ্ধে উস্কানি দেয় ম্যাক্রোঁ।

তুর্কি পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলুত কাভুসৌলু অভিযোগ করেন, আফ্রিকার মতো লেবানন এবং মধ্যপ্রাচ্যে ফ্রান্স ঔপনিবেশিক মানসিকতা বজায় রেখেছে। এই নীতি আঞ্চলিক রাজনীতির জন্য অস্থিতিশীল।

লিবিয়া ইস্যু:

লিবিয়া যুদ্ধে গেল জুনে তুরস্কের ভূমিকায় প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানকে কড়া ভাষায় সমালোচনা করে প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁ। এরদোয়ান দীর্ঘদিন লিবিয়ায় ‘বিপজ্জনক খেলায়‘ মেতে উঠেছেন বলে উদ্বেগ জানান তিনি। বিশ্ব কখনো তুর্কির এমন অবস্থান মেনে নেবে না বলেও মনে করেন তিনি। লিবিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী মুয়াম্মার গাদ্দাফির পতনের পর গৃহযুদ্ধে জর্জরিত দেশটি। যদিও ফ্রান্স নিজেই লিবিয়ার পূর্বাঞ্চলভিত্তিক সামরিক নেতা খলিফা হাফতারকে রাজনৈতিকভাবে সমর্থন দিচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এর আগে লিবিয়ার ইসলামপন্থী জঙ্গিদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে হাফতারকে সামরিক সহায়তা দিয়েছিল প্যারিস।

চলতি বছরে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে দু’দেশের মুখোমুখি অবস্থানে স্বয়ং ন্যাটো। একদিকে ফ্রান্স তার ঔপনেবেশিক শাসন ফিরিয়ে আনতে ব্যস্ত বলে মনে করেছেন বিশ্লেষকরা। অন্যদিকে সিরিয়া, লিবিয়া, ভূমধ্যসাগর থেকে বিভিন্ন জায়গায় নিজেদের শাসন বৃদ্ধির কৌশলগত চেষ্টা চালাচ্ছেন কি সুলতান সুলেমানের তকমা লাগানো এরদোয়ান?