Main Menu

আহমদ শফীকে পূর্বপরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে : পিবিআই রিপোর্ট

হেফাজতে ইসলামের আমির আল্লামা আহমদ শফীকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। হাটহাজারি মাদরাসাকে গ্রাস করতেই পরিকল্পনায় করে তাকে হত্যা করা হয়। পুলিশ ব্যুরো ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) তদন্ত প্রতিবেদনে এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে।

প্রতিবেদনে হেফাজতের বর্তমান আমির জুনায়েদ বাবুনগরী, যুগ্ম সম্পাদক নাসির উদ্দীন মুনিরসহ ৪৩ জনের নাম উল্লেখ করে অভিযুক্ত করা হয়েছে।

সোমবার (১২ এপ্রিল) চট্টগ্রাম জুডিশিয়াল তৃতীয় জজ আদালতে এ প্রতিবেদন দাখিল করে পিবিআই। আদালতে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পিবিআই চট্টগ্রাম জেলার পুলিশ সুপার নাজমুল হােসেন। নরহত্যার দায়ে দণ্ডবিধির ৩০৪ ধারায় প্রতিবেদনটি দেওয়া হয়েছে।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অভিযুক্তরা আল্লামা শফীকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়নি ও উন্নত চিকিৎসা দিতে কালক্ষেপণ করেছে। তাকে হাসপাতালে নেওয়ার চেষ্টা করা হলে মামলার ১নং আসামি নাছির উদ্দিন মুনির বলেন, বুড়া ভং ধরেছে, শালার মৃত্যু নাই। বুড়াকে হাসপাতালে নিতে হলে আমিরের অনুমতি লাগবে। আমিরের অনুমতি ছাড়া এখন থেকে কেউ বের হতে পারবে না।

তখন আল্লামা শফির নাতি ও খাদেমরা অনেক কান্নাকাটি করে তাকে হাসপাতালে নেওয়ার অনুরোধ করেন। নাছির আমিরের আদেশ নিয়ে জানাবে বলে ভিতরে যায়। কিছুক্ষণ পরে বের হয়ে তিনি বলেন, আল্লামা শফীর সঙ্গে একজন যেতে পারবেন। তবে মোবাইল নিতে পারবেন না। কিন্তু একজনের পক্ষে হুজুরের সেবা করা সম্ভব নয় জানালে দীর্ঘ সময় অক্সিজেন বিহীন অবস্থায় রেখে সময় ক্ষেপণ করা হয়। পরে আমিরের অনুমতি নিয়ে তিনজন যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়।

এরপর মাদরাসা থেকে আল্লামা আহমদ শফীকে নিয়ে হাসপাতালের উদ্দেশ্য রওয়ানা হলে গেইট থেকে বের হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মামলার আসামি জুনায়েদ বাবুনগরীর পিএস এনামুল হাসান ফারুকীর নেত্বেত্বে আহমদ শফীকে বহনকারী অ্যাম্বুলেন্স আটকিয়ে দেওয়া হয়। ১ ঘণ্টা আটকে রেখে আহমদ শফির মৃত্যু হয়েছে মনে করে ছেড়ে দেয়। এরপর তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেলে নেওয়া হলে সেখান থেকে ঢাকায় নেওয়া হয়। পরে গত বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর তার মৃত্যু হয়।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, ৪৩ জনের মধ্যে ৩১ জন এজাহারভুক্ত। তারা হলেন মাওলানা নাছির উদ্দিন মুনির, মাওলানা মীর ইদ্রিস, হাবিব উল্লাহ আজাদী, আহসান উল্লাহ, আজিজুল হক ইসলামাবাদী, জাকারিয়া নোমান ফয়েজী, আব্দুল মতিন, মো. শহীদুল্লাহ, মো. রিজুয়ান আরমান, হাসানুজ্জামান, মো. এনামুল হাসান ফারুকী, মীর সাজেদ, জাফর আহমদ, মীর জিয়াউদ্দিন, মাওলানা আহম্মদ, মাওলানা মাহমুদ, আসাদুল্লাহ, জুবাইর মাহমুদ, হাফেজ জুনায়েদ আহমেদ, আনোয়ার শাহ, ছাদেক জামিল কামাল, কামরুল ইসলাম কাসেমি, মো. হাসান, ওবায়েদুল্লা ওবায়েদ, জুবাইর, মাওলানা মোহাম্মদ, আমিনুল হক, সোহেল চৌধুরী, মবিনুল হক, নাইমুল ইসলাম খান ও হাফেজ সায়েম উল্লাহ।

তদন্তে নতুন করে যে ১২ জনের নাম যুক্ত হলো তারা হলেন- জুনায়েদ বাবুনগরী, মাওলানা শফিউল আলম, শিব্বির আহমেদ, আবু সাঈদ, হোসাইন আহমদ, তাওহীদ, এরফান, মামুন, আমিনুল, মাসুদুর রহমান, জাহাঙ্গীর আলম ও নুর মোহাম্মদ।

উল্লেখ্য, হাটহাজারীর আল-জামিয়াতুল আহলিয়া দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম মাদরাসা দীর্ঘদিনের মহাপরিচালক আহমদ শফী গত ১৮ সেপ্টেম্বর ঢাকায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। মৃত্যুর আগের দিন মাদরাসায় তুমুল হট্টগোলের মধ্যে মহাপরিচালকের পদ ছাড়তে বাধ্য হন তিনি।

পরে গত ১৭ ডিসেম্বর শফীর শ্যালক মো. মইন উদ্দিন চট্টগ্রামের আদালতে মামলা করেন। এতে বলা হয়, আহমদ শফীকে ‘মানসিক নির্যাতন করে’ পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে।

মামলায় ৩৬ জনকে আসামি করা হয়েছিল। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে পিবিআইকে তদন্ত করে এক মাসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার আদেশ দিয়েছিলেন। পরে সোমবার আদালতে প্রতিবেদনটি দাখিল করেছে পিবিআই।