Main Menu

১৯৮১ সালে দেশে ফিরে প্রথম ভাষণে যা বলেছিলেন বঙ্গবন্ধুকন্যা

১৯৮১ সালের ১৭ মে বঙ্গবন্ধুকন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছয় বছর পরে দেশে ফিরে সাংগঠনিক ঐক্যের ডাক দিয়েছিলেন। বলেছিলেন, আসুন আবার আমরা এক হই। স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের পর শেখ হাসিনা এই দিন সন্ধ্যায় আওয়ামী লীগ আয়োজিত গণসংবর্ধনা সমাবেশে কান্নাজড়িত কণ্ঠে জনগণের কাছে তার পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যার বিচার দাবি করেন।

১৯৭৫ এ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার সময় তিনি ও ছোট বোন শেখ রেহানা দেশের বাইরে ছিলেন। এরপর আর তাদের দেশে ফিরতে দেওয়া হয়নি।

১৯৮১ সালের এইদিনে দেশে ফেরার পরে তার ফেরা ও কর্মসূচি নিয়ে ১৮ মে প্রতিবেদন প্রকাশ করে ইত্তেফাক। সেই প্রতিবেদনে বলা হয়, শেখ হাসিনা বলেন আপনাদের কাছে আমি বিচার চাই। দেশের বর্তমান দুর্বিষহ অবস্থার জন্য যারা দায়ী জনগণের নিকট তাদের বিচার দাবি করে তিনি বলেন খুনের মাধ্যমে ক্ষমতায় এসেছে যে সরকার তারা জনগণের কল্যাণ করতে পারে না। তিনি জনগণকে নিয়ে সোনার বাংলার স্বপ্ন রূপায়নের লক্ষ্যে সংগ্রাম সূচনার অঙ্গীকার করে বলেন, সেইদিন ১৯৭৫ এর হত্যার বিচার হবে যেদিন বঙ্গবন্ধুর দ্বিতীয় বিপ্লবের কর্মসূচি বাস্তবায়িত হবে, যেদিন শোষণ মুক্ত সমাজ ও শোষনহীন গণতন্ত্র কায়েম হবে। তিনি সমস্ত ভেদাভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান জানিয়ে বলেন, ‘আসেন আবার আমরা এক হই।’

শেরেবাংলা নগরে সুপ্রশস্ত মানিক মিয়া এভিনিউতে আয়োজিত সংবর্ধনা সভায় এসব কথা বলেন তিনি। সেদিন ছিল ঝড়-বৃষ্টির দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া। তার মধ্যেও দূর দূরান্ত থেকে মানুষ শুনতে আসে বঙ্গবন্ধুকন্যার কথা। দলীয় নেত্রী আবেগময় কান্নার সময় তার বক্তৃতার আহবানের জবাবে আধ ঘন্টাব্যাপী এই সমাবেশে শ্রোতারা মুহুর্মুহু স্লোগান দিতে থাকে। সভায় সভাপতিত্ব করেন আব্দুল মালেক উকিল। সভানেত্রীকে স্বাগত জানিয়ে বক্তৃতা করেন সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক। বক্তৃতার মঞ্চে দাঁড়িয়ে শেখ হাসিনা বারবার অঝোর কান্নায় ভেঙে পড়েন। তিনি বলেন পঁচাত্তরে হত্যাকাণ্ডের জন্য সরকারের কাছে নয় আপনাদের কাছে বিচার চাই। দল ও জনগণের কথা ভেবে স্বামী পুত্রকে রেখে দেশে আসবার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই ঢাকা শহরে আমার কেউ নাই। বাংলার দুঃখী মানুষের জন্য পিতার জীবন দানের কথা স্মরণ করে তিনি বলেন এই সংগ্রামে আমিও জীবন দান করতে প্রস্তুত। তিনি বলেন আমি নেতা নই। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ প্রতিষ্ঠার একজন কর্মী। বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন বাস্তবায়িত করার জন্য আপনাদের নিয়ে আমি নিরন্তর সংগ্রাম চালিয়ে যাব। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন থেকেশুরু করে অদ্যাবধি বিভিন্ন সংগ্রামের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকলে গত ছয় বছরে শোষণমুক্ত সমাজ গড়ার লক্ষ্যে আমরা অনেক দূর এগিয়ে যেতাম। বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার সময় দ্রব্যমূল্য কি ছিল আর আজ মূল্য কোথায় পৌঁছেছে তা বিচার করবার দায়িত্ব জনগণের উপর ছেড়ে দিয়ে তিনি বলেন, কৃষক কৃষি পণ্যের দাম পায় না, শ্রমিক নেতাদের ন্যায্য মজুরি পায় না, জনগণের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির পথে ঘাটে মানুষ খুন হচ্ছে। সম্বর্ধনা সভায় আব্দুল মালেক উকিল বলেন এক মুজিবকে হত্যা করা হয়েছে কিন্তু বাংলার ঘরে ঘরে লক্ষ লক্ষ মুজিব জন্ম হয়েছে।