‘রোহিঙ্গা ইস্যুতে সরকার ব্যর্থতার পরিচয় দিয়ে আসছে’


সরকারের সার্বিক অব্যবস্থাপনা ও দুর্বৃত্তায়নের ধারাবাহিক পরিণতিই রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে কূটনৈতিক স্থবিরতার প্রধান কারণ উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, এজন্য সবার আগে একটি গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা করার দিকে আমাদের মনোযোগ দিতে হবে। তাহলেই রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের জন্য নির্বাচিত সরকার আন্তর্জাতিকভাবে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারবে। এমতাবস্থায় রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক মহলকে বাংলাদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় নৈতিক ও যৌক্তিক ভূমিকায় এগিয়ে আসার আহবান জানাচ্ছি।
আজ সোমবার দুপুরে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। মির্জা ফখরুল বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যুতে শুরু থেকেই জনবিচ্ছিন্ন এই অনির্বাচিত সরকার চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিয়ে আসছে। ১২ লক্ষাধিক রোহিঙ্গাদের তাদের মাতৃভূমি রাখাইনে প্রত্যাবাসনে মিয়ানমারের ওপর কার্যকর চাপ সৃষ্টি করতে চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে। এ পর্যন্ত একজন রোহিঙ্গা শরণার্থীকেও সরকার রাখাইনে ফেরত পাঠাতে পারেনি। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে সরকারের আন্তরিকতা ও সদিচ্ছাও তারা প্রমাণ করতে পারেনি।
তিনি বলেন, সম্প্রতি বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদে আমরা অবগত হয়েছি যে, গত ৩রা ডিসেম্বর রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মধ্যে থেকে ১৬৪২ জনের একটি দলকে কক্সবাজার থেকে নূতন প্রতিষ্ঠিত ভাসানচরে স্থানান্তর করা হয়েছে। ২০১৭ সালের আগস্টে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর গণহত্যা ও নিপীড়নের মুখে দেশটি থেকে কয়েক লক্ষ রোহিঙ্গা প্রাণের ভয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। একই বছরের নভেম্বরে কক্সবাজার থেকে এক লক্ষ রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে সরিয়ে নেয়ার লক্ষ্যে একটি প্রকল্প হাতে নেয় সরকার। তখন থেকেই রোহিঙ্গারা ভাসানচরে যেতে তীব্র আপত্তি জানিয়ে আসছিল। তাছাড়া জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালসহ আন্তর্জাতিক অর্থায়নে পরিচালিত উন্নয়ন সংস্থাগুলো এর বিরোধিতা করে আসছে। জাতিসংঘসহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থার আপত্তি উপেক্ষা করে সরকার এ স্থানান্তর কার্যক্রম শুরু করায় নতুন সংকট সৃষ্টির আশংকা তৈরি হয়েছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, রোহিঙ্গা শরণার্থী সমস্যা বাংলাদেশের একক সমস্যা নয়। এ সমস্যা একটি বৈশ্বিক সমস্যা। জাতিসংঘসহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থার এ সংকট নিরসনে সমান দায়িত্ব রয়েছে। সকলের সাথে সমন্বয় না করে সম্পূর্ণ এককভাবে বাংলাদেশ ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের স্থানান্তর কার্যক্রম শুরু করে সংকট সমাধানে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকে নাখোশ করেছে। এটি রোহিঙ্গা শরণার্থী সমাধানে বাংলাদেশের কূটনৈতিক ব্যর্থতার একটি নূতন সংযোজন।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ভাসানচর প্রকল্পটি মূলত সরকারের আশ্রয়ন প্রকল্প-৩ এর একটি বর্ধিত প্রকল্প। এই প্রকল্পটি বর্তমান আকণ্ঠ দুর্নীতিতে নিমজ্জিত সরকারের দুর্নীতিগ্রস্ত একটি মেগা প্রজেক্ট। ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের স্থানান্তরের জন্য প্রকল্পটিতে প্রাথমিকভাবে ২ হাজার ৩১২ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়। পরবর্তীতে অন্যান্য প্রজেক্টের ন্যায় প্রকল্প ব্যয় বৃদ্ধি করে তা ৩ হাজার ৯৫ কোটি টাকা করা হয়। যথাযথ টেন্ডার প্রক্রিয়া অনুসরণ না করেই এসব প্রকল্পে দীর্ঘমেয়াদে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাটের সুযোগ রয়েছে। হতাশার কথা হলো, এই প্রকল্প তথা সরকারের সুদূরপ্রসারী দুর্নীতির পক্ষে সাফাই গাইতে কিছু দলকানা সাংবাদিক দিয়ে ভাসানচরের আশ্রয় শিবিরের পক্ষে নানা ধরনের প্রচার প্রোপাগান্ডা চালানো হচ্ছে। ভাবখানা এমন, রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে প্রেরণ করাই যেনো সংকট সমাধানে সরকারের প্রধান লক্ষ্য। এটাই যেন প্রত্যাবাসন। ভাসানচরে শরণার্থী স্থানান্তরে সরকারের পক্ষে সাফাই না গেয়ে মিয়ানমারে নিরাপদ ও স্থায়ী রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের পক্ষে তাদের সরব অবস্থান ব্যক্ত করলে রোহিঙ্গা সংকট সমাধান তরান্বিত হতে পারে বলে আমরা মনে করি।