ভাস্কর্য ও মূর্তি : শিল্পের আকাল থেকে বাংলাদেশ মুক্তি পাক


ভাস্কর্য ও মূর্তি দু’টো আলাদা বিষয় হলেও দেখতে একই ধরণের। বাংলাদেশে ক’দিন পরেই এধরণের বিষয় নিয়ে তুকালাম হতে দেখি। ধর্মীয় বিষয় সামনে এনে শেষ পর্যন্ত রাজনৈতিক হাতিয়ার হয়ে নানা মহলের পক্ষপাত ধরণের পর্যালোচনা শুরু হয়ে। এমনতর ঘটনায় বিপাকে পড়েন সাধারণ জনগণ। বিশ্বাস-অবিশ্বাসের দোলাচাল নিয়ে এক পক্ষ থাকেন একেবারে নীরব। এই নীরব পক্ষ হলেন বৃহত্তর জনগোষ্ঠী। শিল্পের আড়ালে আরেক দল স্বঘোষীত নাস্তিক রয়েছেন তারা বিভিন্ন টুইস্টিং বক্তব্য পেশ করে পরিস্থিতিকে আরো ঘোলাটে করে তুলেন। নাস্তিক ও মৌলবাদী এই উভয় উগ্রবাদীদের সংখ্যা কম হলেও তাদের হৈ চৈ একটু বেশী বলে মারমুখী হয়ে ওঠার সম্ভাবনা দেখা দেয় বেশী। তখন আর কেউই ভাস্কর্য শিল্পের মূল্যায়ন কেমন হওয়া দরকার সে বিষয়ে মৌলিক কোনো বয়ান নিয়ে আসেন না। আমাদের একুশের শহীদ মিনার কিংবা স্বাধীনতার স্মৃতিস্তম্ভ—এসব ভাস্কর্য শিল্প নিয়ে বাঙালি মুসলমানরা তো কোনো আপত্তি তুলেন না। কিন্তু কেন? কারণ এর শিল্পমান ও কাঠামোগত আঙ্গিক বৃহৎজনগোষ্ঠীর বিশ্বাস ও মূল্যবোদের সঙ্গে যথেষ্ট সঙ্গতিপূর্ণ। বিমূর্ত ভাবনার শিল্পবোধ এসব স্মৃতিস্তম্ভগুলোর মধ্যে প্রতিফলন ঘটেছে বলে এসবের প্রতি কারোর কোনো আপত্তি ওঠেনি। শিল্পাচার্চ জয়নুলের কাজগুলো দেখলে এদেশের মননশিল্প কেমন হওয়া দরকার, একটা ভালো ধারণা পাওয়া যায়। এখন থাকলো বিষয়ভিত্তিক ভাস্কর্য নির্মাণের উদ্দেশ্য ও লক্ষ। শেখ মুজিব শাসক গোষ্ঠীর কাছে অধিকহারে মান্যবর একজন ব্যাক্তি। পৃথিবীতে ক্ষমতাসীন একনায়করা তাদের জিবিতকালে নিজের ভাস্কর্য নির্মাণের প্রচলন আজও চলমান রয়েছে। লেনিন থেকে সাদ্দাম—এদের অধিকহারে ভাস্কর্য দেশের প্রতিটি কোণায় কোণায় স্থাপন করে তাদের দুর্দণ্ড প্রতাপের স্বাক্ষর রেখে গেছেন। আবার দীর্ঘশাসনকালের পর ক্ষমতার পট পরিবর্তনে চরম অপমানের সঙ্গে সেসব ভাস্কর্য বুলডোজার দিয়ে গুড়িয়ে ফেলার ইতিহাসও খুবই সাম্প্রতিক। এমব ঘটনা আমাদের সময়কালেই ঘটেছে। বাংলাদেশেও এখন চলছে অনির্বাচিত সরকারের শাসনকাল। দলদাসদের অতি উৎসাহে মুজিববন্দনায় বিগলিত শেখ হাসিনাও এসব বিষয় নিয়ে যথেষ্ট ভাবছেন। প্রতিবাদের মুখে আমরা তার ও তার সরকারের দোলাচলও বুঝতে পারছি। তিনি বলেছেন, শেখ মুজিবের ভাস্কর্য-বিরোধীরা সম্মানজনকভাবে বলছে, না অসম্মানজনকভাবে বলছে। শেষমেস বিষয়টি নিয়ে তিনি ভাবছেন। তিনি যদি করিৎকর্মা হন তাহলে তার পিতাকে ভবিষ্যতের অসম্মানের হাত থেকে রক্ষার সুযোগ তিনি গ্রহণ করবেন। আর যদি সাময়িক উৎফল্লতায় গদগদ হয়ে চাঁইদের চক্রান্তে পা রাখেন তাহলে আমাদের বলার কিছু নেই। প্রথমেই বলেছিলাম মূর্তি ও ভাস্কর্য এক জিনিস নয়। মূর্তি ভাস্কর্যের মতো হলেও তা পুঁজার জন্য বানানো হয়। ভাস্কর্য কেবলই একটি শিল্পকর্ম। এখন এই শিল্পকার্মের আবেদন কি তা ভালোভাবে বুঝতে হবে। শিল্পের একটা পরিমিতিবোধ আছে। শেখ মুজিব অনুরোক্তরা বলছেন, দেশের প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তার ভাস্কর্য নির্মাণ করা হোক। এই যে তাদের ‘নালায়েক’ ধরণের আবেদন এটা কিন্তু জাতি হজম করতে পারছে না। চামচাদের উদ্দেশ্য এখানে স্পষ্ট। তারা চাচ্ছে, আমাদের মতো গোটা জাতি দাসে রূপান্তর হোক! তাদের নষ্ট রজিনীতি দিয়ে ভাস্কর্যের আবেদনকে স্থূল করে তুলেছে। তারা মনে করেছে কিছু সুড়কি, সিমেন্ট আর রড দিয়ে কারোর শরীর বানালেই শিল্প হয়ে যায়। ভাস্কর্য বিদ্যা আর স্থাপত্য বিদ্যার আকাল থেকে বাংলাদেশ মুক্তি পাক।