Main Menu

বন্দি খালেদা জিয়ার সাত এমপির সাক্ষাৎ নিয়ে রহস্য!

বন্দি খালেদা জিয়াকে ছয় মাস পর স্মরণ করলেন বিএনপির সাত সংসদ সদস্য। নয় মাস আগে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ী হয়ে, তিনমাস পর সংসদে গিয়ে অবশেষে অর্ধবছর পর বন্দি নেত্রীর খোঁজ নিতে গেলেন তারা। যদিও দীর্ঘ এই সময়ের মধ্যে দলীয় এমপিরা খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করেননি।
হঠাৎ করে জোটবদ্ধ হয়ে কোন উদ্দেশ্যে অসুস্থ চেয়ারপারসনের সঙ্গে তারা দেখা করলেন এবং কেনই বা তার চিকিৎসার জন্য ‘বিদেশ পাঠানো’ সংক্রান্ত বক্তব্য দিলেন, তা দলের হাইকমান্ডের অনেকেরই জানা নেই। কার পরামর্শে তারা খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশ পাঠানোর প্রস্তাব দিলেন এ নিয়ে দলে রহস্য তৈরি হয়েছে।

জানা যায়, গত মঙ্গলবার খালেদা জিয়ার সঙ্গে বিএনপির তিনজন এমপি দেখা করার পরদিন বুধবার সাক্ষাৎ করেছেন দলটির অপর চার এমপি। সাক্ষাতের পর তারা বলেছেন, বিএনপি প্রধানের শারীরিক অবস্থা ‘খুবই খারাপ’, এজন্য তার উন্নত চিকিৎসা প্রয়োজন। বিএনপির এমপিরা এ-ও বলেছেন, জামিনে মুক্তি পেলে খালেদা জিয়া দেশে কিংবা বিদেশেও চিকিৎসা নিতে পারেন।

বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হারুনুর রশীদ হাসপাতালে খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে সাংবাদিকদের বলেন, ‘জামিন পেলে খালেদা জিয়া উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাবেন।’

এছাড়া হারুন সচিবালয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে দেখা করেও খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা নিয়ে কথা বলেন। এর আগে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গেও হারুন সাক্ষাৎ করেছেন। আর এই সাক্ষাৎ স্থায়ী কমিটির অনুমতি ছাড়াই হয়েছে।

বিএনপির নির্ভরযোগ্য সূত্র আমার সংবাদকে জানায়, খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাত এমপির সাক্ষাতের বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ছাড়া অন্য কেউ জানতেন না। তবে স্থায়ী কমিটির দুই-তিনজন সদস্য শেষ সময়ে ইঙ্গিত পেলেও পরে বাধা দিতে পারেননি। কারণ তাদের সাক্ষাতের বিষয়ে মির্জা ফখরুল সমর্থন দিয়েছেন। তাই কৌশলে সৌজন্য সাক্ষাতের কথা বলেই তারা দেখা করতে যান।

খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য বিএনপি যখন মাঠপর্যায় থেকে আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছে, বাধা পেয়েও তিনটি বিভাগীয় মহাসমাবেশ সফল করে নতুন কর্মসূচির কথা চিন্তা করছে— ঠিক সেই মুহূর্তে খালেদা জিয়ার মুক্তির ব্যাপারে হঠাৎ করে কেন এই সংসদরা নড়েচড়ে বসলেন বিষয়টি দলের অনেকেই সন্দেহের চোখে দেখছেন। সংসদে গিয়ে ক্ষমতাসীন সরকারকে বৈধতা, সংসদ সদস্যের সব সুবিধা গ্রহণ করে খালেদা জিয়াকে মুক্তির ব্যাপারে করণীয় উপস্থাপন করার মতো সাহস নিয়েও অনেকে হতভম্ব।

বিএনপির অনেক নেতাই মনে করছেন, এই সাত সাংসদের দেখা করার উচিত ছিলো আরও ছয় মাস আগে। যখন তারা সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নিলেন। দলটির সূত্র মতে, তারা যদি সাত মাস আগে দেখা করতেন তাহলে খালেদা জিয়া কখনোই তাদের সংসদে যেতে অনুমতি দিতেন না। এই সরকারের বৈধতার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত দিতেন না। সাত মাস আগে দেখা করলে খালেদা জিয়ার নির্দেশ মানতে বাধ্য হতেন সংসদ সদস্যরা। তখন হয়তো দলের ঘাপটি মেরে থাকা বামপন্থি নেতাদের রাজনৈতিক ছক বাস্তবায়ন করা সম্ভব হতো না।

খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার পর ও নির্বাচনের আগ থেকেই বিএনপির নেতৃত্ব বাম রাজনীতির কৌশলে চলছে। পাশের একটি দেশ, ভবিষ্যতে বাংলাদেশে বিজনেস পলিসির জন্য বিএনপিতে বাম রাজনীতির আদর্শ তৈরি করতে জোর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ভবিষ্যৎ সেই ছকের আলোকেই কয়েকজন নেতাকে হাতে রেখে আশ্বাসের বাণী দিয়ে বিএনপি থেকে জাতীয়তাবাদী চরিত্র কিছুটা নষ্ট করার প্রচেষ্টা চলছে। ভবিষ্যৎ নেতৃত্বের লোভে দলের বড় একটি অংশ খালেদা জিয়ার মুক্তিতে ক্ষমতাসীন দলের আনুগত্য হয়ে চলছে। খালেদা জিয়ার অনুমতি ছাড়া সংসদ সদস্যরা বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার ব্যাপারে বক্তব্য দেয়ার বিষয়টিও ক্ষমতাসীন সরকারের ছক বলে মনে করছেন অনেকে।

এছাড়া আন্তর্জাতিক একটি মহল কোনোভাবেই চাচ্ছে না, খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য দেশে আন্দোলন-সংগ্রামের নামে কোনো অগ্নিসন্ত্রাস, জ্বালাও-পোড়াও, হরতাল-অবরোধে কোনো সহিংস পরিস্থিতি তৈরি হোক। সব সময় মহলটি খালেদা জিয়ার মুক্তিতে বিএনপিকে আশ্বাস দিয়ে রাখছে, সান্ত্বনা দিয়ে রেখেছে। কয়েক মাস পরপর খালেদা জিয়ার মুক্তির ইস্যুটি সামনে নিয়ে আসছেন। শেখ হাসিনা ভারত যাওয়ার আগ মুহূর্তে হঠাৎ খালেদার মুক্তির ব্যাপারের বিষয়টিও সামনে নিয়ে আসা পূর্বপরিকল্পিত ছকের অংশ। কেননা চলমান পাঁচ বছর আওয়ামী রাজনীতির ইতিহাসে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময়।

২০২০ সালে পূর্ণ হবে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী এবং ২০২১ সাল হবে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী। ২০২০-২১ সালে দেশে কোনো ধরনের রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরি হোক; ক্ষমতাসীন সরকার তা চায় না। তাই কৌশলে বিএনপির সংসদ সদস্যদেরও রাজনৈতিক স্বার্থে আওয়ামী লীগ ব্যবহার করছে বলে দলের বড় একটি অংশ ধারণা করছে। আন্দোলন-সংগ্রামের মাধ্যমে সরকারকে বাধ্য করা ছাড়া খালেদা জিয়ার মুক্তি কোনোভাবেই সম্ভব নয়।

কারণ সেদিনই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারি বাসভবন গণভবনে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে এক অনির্ধারিত বৈঠক ঘোষণা দিয়েছেন খালেদা জিয়ার বিষয়ে ‘নো কমেপ্রামাইজ’। সরকারের এমন নিশ্চিত ইঙ্গিত জেনেও বিএনপির একটি অংশ যারা আন্দোলন করতে অনিচ্ছুক তারা সমঝোতায় মুক্তির বিষয়টি নানাভাবে সামনে নিয়ে আসছেন।

এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, ‘বেগম খালেদা জিয়া আপসহীন নেত্রী এই উপাধি খারিজ করতে গিয়ে ধরা খেয়েছে সরকার। বেগম খালেদা জিয়া কোনো ধরনের আপস, সরকারের সাথে সমঝোতা বা প্যারোলে মুক্তি নেবেন না। গণতন্ত্রের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে, দায়িত্ববোধ থাকার কারণে খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলন আমরা করছি, ভবিষ্যতেও করব। আন্দোলনের মধ্য দিয়ে বেগম খালেদা জিয়া মুক্তি লাভ করবে। বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যু জেলখানায় হলে তা বহন করার ক্ষমতা আওয়ামী লীগ সরকারের নেই।

ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, আইনগত প্রক্রিয়াতেই খালেদা জিয়া মুক্ত হবেন। মানবিক দিক এবং তার অসুস্থতার জন্য স্থায়ী জামিনে মুক্তি দিয়ে আমরা তার উন্নত চিকিৎসার দাবি জানিয়ে আসছি। আমরা আন্দোলন করছি, সমাবেশ করছি, মানববন্ধন করছি।

দলটির আরেক স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, খালেদা জিয়া ১৭ কোটি মানুষের নেতা। হয় তার মুক্তি আইনি প্রক্রিয়ায় হবে, না হয় আন্দোলনের মাধ্যমে হবে। তবে, কারামুক্তির জন্য তিনি কারো কাছে মাথানত করবেন না।