গোলাপি অ্যাডিলেডে বেদনায় নীল ভারত


সর্বশেষ অস্ট্রেলিয়া সফরে বিরাট কোহলির ভারত লিখেছিল গর্বের ইতিহাস। ২০১৮-১৯’র সফরে ইতিহাসে প্রথমবারের মতো অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে টেস্ট জয়ের উল্লাসে মেতেছিল ভারত। সেবারও চার ম্যাচের টেস্ট সিরিজ শুরু হয়েছিল অ্যাডিলেডে। ৩১ রানে জিতে সিরিজ শুরু করেছিল কোহলির ভারত। অ্যাডিলেডের ওভালে এবারের সিরিজ শুরুর ম্যাচে ছিল গোলাপি বলের রোমাঞ্চ। দিনরাতের টেস্টে প্রথমবার মুখোমুখি অস্ট্রেলিয়া-ভারত। গোলাপি রোমাঞ্চ নিয়ে শুরু হওয়া টেস্টে মাত্র আড়াই দিনেই হার দেখলো সফরকারীরা। দ্বিতীয় ইনিংসে ৩৬ রানে অলআউট হয়ে বিরাট কোহলির দল ভারতীয় ক্রিকেটকে উপহার দিয়েছে বড় লজ্জা।
টেস্ট ক্রিকেটে ৩৬ রানই ভারতের সর্বনিম্ন দলীয় সংগ্রহ। ১৪৩ বছরের টেস্ট ইতিহাসে যা পঞ্চম সর্বনিম্ন স্কোর (যৌথভাবে)। এর আগে ১৯৭৪ সালে লর্ডস টেস্টে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৪২ রানে অলআউট হয়েছিল ভারত। ওপেনার জো বার্নসের অপরাজিত ৫৩ রানের ইনিংসে ৯০ রানের লক্ষ্য ২১ ওভারে পেরিয়ে যায় অস্ট্রেলিয়া। চার ম্যাচ সিরিজের প্রথম টেস্টে ৮ উইকেটের জয়ে ১-০তে এগিয়ে স্বাগতিকরা। দু’দলের দ্বিতীয় টেস্ট শুরু ২৬শে ডিসেম্বর, মেলবোর্নে।
সন্তান-সম্ভবা স্ত্রীর পাশে থাকতে সিরিজের বাকি তিন ম্যাচে খেলবেন না অধিনায়ক বিরাট কোহলি। নিজে টেস্ট ব্যাটসম্যানদের র্যাঙ্কিংয়ের দুইয়ে রয়েছেন। সাদা পোশাকের ক্রিকেটে সময়ের অন্যতম সেরা চেতেশ্বর পূজারা ও আজিঙ্কা রাহানের মতো ব্যাটসম্যান থাকার পরও নিজেদের ইতিহাসের সর্বনিম্ন ইনিংসের লজ্জা পেলো ভারত। ম্যাচ শেষে মাইক্রোফোনের সামনে কথা বের হচ্ছিল না কোহলির মুখ থেকে। হতাশা আর কষ্ট লুকানোর বৃথা চেষ্টা করেননি ভারত অধিনায়ক। বলেন, ‘এটা খুব বেদনাদায়ক যা ভাষায় প্রকাশ করা কঠিন। ভালো অবস্থানে থেকে হঠাৎ এভাবে সব কিছু শেষ হওয়াটা বিব্রতকর। প্রথম দুই দিন আমরা ভালো ক্রিকেট খেলেছিলাম। তারপরও এমন হার দেখাটা কষ্টের।’
আড়াই দিনে অ্যাডিলেড টেস্ট জিতে গোলাপি বলের রেকর্ডটা আরেকটু উপরে নিয়ে গেল অজিরা। গোলাপি বলে আট দিনরাতের টেস্টের সবকটিতেই জয় অস্ট্রেলিয়ার। গত বছরের নভেম্বরে কলকাতায় নিজেদের প্রথম দিনরাতের টেস্টে বাংলাদেশকে আড়াই দিনে হারিয়েছিল ভারত।
ম্যাচসেরা প্রথম ইনিংসে অপরাজিত ৭৩ রানের ইনিংস খেলা টিম পেইন। অস্ট্রেলিয়া অধিনায়ক ভাবেননি জয়টা এত সহজে ধরা দেবে। তিনি বলেন, ‘সত্যি বলতে এমনটা কখনই ভাবনায় আসেনি। ভেবেছিলাম কঠিন লড়াই হতে চলেছে। পুরো কৃতিত্ব বোলারদের।’
প্রথম ইনিংসে ২৪৪ রান করে ভারত। জবাবে ১৯১ রানে অলআউট হয় অস্ট্রেলিয়া। দ্বিতীয় ইনিংসে আগের দিনের ১ উইকেটে ৯ রান নিয়ে শনিবার তৃতীয় দিন শুরু করে ভারত। দলীয় ১৫ রানে ফেরেন নাইটওয়াচম্যান জসপ্রিত বুমরাহ। ১৫ রানেই আরো তিন উইকেট হারায় ভারত।
প্যাট কামিন্স ও জস হ্যাজেলউডের দুর্দান্ত বোলিংয়ের কোন জবাব ছিল না সফরকারীদের। শেষ ব্যাটসম্যান মোহাম্মদ শামি আহত হয়ে ফিরলে ৩৬ রানে থামে ভারতের দ্বিতীয় ইনিংস। ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের কেউই ছুঁতে পারেননি দুই অঙ্ক। টেস্ট ইতিহাসে এমন লজ্জার রেকর্ড গড়া দ্বিতীয় দল ভারত। এর আগে প্রথমবার ১১ জন ব্যাটসম্যানের দুই অঙ্ক ছুঁতে না পারার লজ্জা দক্ষিণ আফ্রিকার। ১৯২৪ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে কোন প্রোটিয়া ব্যাটসম্যান ছুঁতে পারেননি দুই অঙ্ক। রানের খাতা খুলতে পারেননি চেতশ্বর পূজারা, আজিঙ্কা রাহানে ও রবিচন্দন অশ্বিন। সর্বোচ্চ ৯ রান করেন মায়াঙ্ক আগারওয়াল। বিরাট কোহলি ৪ ও হনুমা বিহারি ফেরেন ৮ রান করে। জস হ্যাজেলউড ৮ রানে নেন ৫ উইকেট। টেস্ট ক্রিকেটে ২০০ উইকেটের দেখা পেয়েছেন ডানহাতি এই পেসার। বাকি ৪ উইকেট নেন প্যাট কামিন্স। তিনি ছুঁয়েছেন দেড়শ টেস্ট উইকেটের মাইলফলক।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
টস: ভারত, ব্যাটিং
ভারত: ২৪৪ ও ৩৬
অস্ট্রেলিয়া : ১৯১ ও ৯৩/২
ফল: অস্ট্রেলিয়া ৮ উইকেটে জয়ী
ম্যাচসেরা: টিম পেইন
সিরিজ: ৪ ম্যাচ সিরিজে ১-০তে এগিয়ে অস্ট্রেলিয়া
টেস্টে ভারতের সর্বনিম্ন
৩৬/১০ – প্রতিপক্ষ অস্ট্রেলিয়া (২০২০)
৪২/১০ – প্রতিপক্ষ ইংল্যান্ড (১৯৭৪)
৫৮/১০ – প্রতিপক্ষ অস্ট্রেলিয়া (১৯৪৭)
৫৮/১০ – প্রতিপক্ষ ইংল্যান্ড (১৯৫২)
৬৬/১০ – প্রতিপক্ষ দক্ষিণ আফ্রিকা (১৯৯৬)
টেস্টে দলীয় সর্বনিম্ন
নিউজিল্যান্ড ২৬/১০ – প্রতিপক্ষ ইংল্যান্ড (১৯৫৫)
দক্ষিণ আফ্রিকা ৩০/১০ – প্রতিপক্ষ ইংল্যান্ড (১৮৯৬)
দক্ষিণ আফ্রিকা ৩০/১০ – প্রতিপক্ষ ইংল্যান্ড (১৯২৪)
দক্ষিণ আফ্রিকা ৩৫/১০ – প্রতিপক্ষ ইংল্যান্ড (১৮৯৯)
দক্ষিণ আফ্রিকা ৩৬/১০ – প্রতিপক্ষ অস্ট্রেলিয়া (১৯৩২)
অস্ট্রেলিয়া ৩৬/১০ – প্রতিপক্ষ ইংল্যান্ড (১৯০২)
ভারত ৩৬/১০ – প্রতিপক্ষ অস্ট্রেলিয়া (২০২০)